প্রবাদে আছে, ঘুম, খাওয়া, ভয়; যত বাড়ায় তত হয়। প্রবাদটি যে মিথ্যে নয় তা বর্তমান যুগের নানা রকম ভয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আর এই ভীতি বা ভয়ের অধিকাংশই যে অমূলক তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না।
দিনে দিনে মানুষ যত বাড়ছে ভয়ও ঠিক ততটাই বাড়ছে। উচ্চতাভীতি, মাকড়সাভীতি ইত্যাদি মানসিক বিকারগুলোর সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মধ্যে নতুন কিছু ফোবিয়া শনাক্ত করেছেন মনোবিদরা। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ ‘ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজঅর্ডার’ বা ডিএসএম-৫ এ এগুলোকে নতুন ফোবিয়া হিসেবে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।
নোমোফোবিয়া
বর্তমানে এমন অনেকেই আছে ফোন ছাড়া এক দণ্ড থাকতে পারে না। ফোন ছাড়া কিছু সময় কাটালেই মনে হয়- কতো না নোটিফিকেশন, কল আর মেসেজ এসে বসে আছে। এ কারণে তারা ফোন ছাড়া থাকতেই ভয় পায়। এভাবেই এক পর্যায়ে তা পরিণত হয় ‘নোমোফোবিয়ায়’।
এডিটোভালটাস ফোবিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে সবসময় উদ্বেগে থাকে কিছু মানুষ। উদ্বেগ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, পোস্ট করা ছবি নিয়ে কে কী ভাবল, কোন পোস্টে বা কমেন্টে কে কী মনে করল এগুলো ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যায়। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এ ভেবে ছবি বা মন্তব্য পোস্ট করতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নেয়! এটিকেই বলা হচ্ছে এডিটোভালটাস ফোবিয়া। আক্ষরিক অর্থে বলা যায়, ফেসবুক ফোবিয়া।
ইকো অ্যাংজাইটি
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ঋতু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীর নতুন রোগবালাই এবং আচরণে পরিবর্তন দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এসব মিলে জন্ম দিয়েছে এক ফোবিয়া। এর মধ্যে প্রায়ই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মাণ হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে জেঁকে বসছে অভাবনীয় বিপদের শঙ্কা। এটিকেই বলা হচ্ছে ‘ইকো অ্যাংজাইটি’।
ফুড নিওফোবিয়া
ভাবতে অবাক লাগলেও অনেক মানুষই খাওয়াটাকে চরম বিরক্তিকর কাজ বলে বিবেচনা করছে। অনেকে সাপ্লিমেন্ট ফুড বা ট্যাবলেটের কথাও চিন্তা করছে। খাবারের নতুন কোনো পদ দেখলে এ ভীতি আরো বেড়ে যায়। খাবার দেখলেই পালিয়ে যায়। এই ভীতিই ধীরে ধীরে উদ্বেগের আকার নেয়। তখনই জন্ম নেয় ‘ফুড নিওফোবিয়া’।
কার্বোফোবিয়া
ডায়েট এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এই অতিসচেতনতার কারণে কার্বোহাইড্রেট দেখলেই বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতন (বলা ভালো ওজন সচেতন) মেয়েরা ভয়ে সিঁটিয়ে যায়! তারা ধরেই নেয় কার্বোহাইড্রেট মানেই ক্ষতিকর। এরকম আচরণ থেকেই এক সময় পেয়ে বসে ‘কার্বোফোবিয়া’।