করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইন কেনাকাটাতেই আস্থা


onlineshop#paperslife


দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাকে সুরক্ষা দিতে অনেক আয়োজন করেছে। ফলে বাইরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই।
নগদ টাকাবিহীন কেনাকাটা, কন্টাক্টলেস পেমেন্ট ব্যবস্থা, ফ্রি হোম ডেলিভারির মতো আয়োজন করে তারা ক্রেতাকে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে চেষ্টা করছে।’
কোনও কোনও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে নগদ ছাড়, ক্যাশব্যাক ও  বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিচ্ছে।  ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে মার্কেটে শপিং করতে যাওয়ার চেয়ে ঘরে বসেই কেনাকাটার অবারিত সুযোগ এসেছে। কিছু কিছু ই-কমার্স ও মার্কেটপ্লেস ক্রয় করা পণ্য কোন চার্জ  ছাড়ায় বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস আজকের ডিল ডট কমের (www.ajkerdeal.com) প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘যদিও এবারের ঈদে কেনাকাটা কম হবে। কারণ, বেশিরভাগ মানুষ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে আছে। তারপরও অনলাইনে কেনাকাটা বাড়বে বলে আশা করা যায়।

তিনি আরো জানান, আজকের ডিল ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও নানা অফার দেবে, আর  ছাড় ঘোষণা করবে। তবে সবচেয়ে যেটা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে তা হলো ‘ফ্রি ডেলিভারি’। বিকাশের মাধ্যমে অর্ডার করলেই আজকের ডিল সারাদেশে যেকোনও পণ্য পৌঁছে দেবে কোনও ডেলিভারি খরচ ছাড়াই।

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি (www.evaly.com.bd) ঈদ উপলক্ষে ইভ্যালি ‘ফ্যাশন এক্সপ্রেস’ নামের একটি সেবা চালু করেছে। এখানে যেকোনও ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্যের বিক্রেতা তার একটি এক্সপ্রেস শপ খুলতে পারবেন। তারপর সেই এক্সপ্রেস শপের মাধ্যমে তার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, নামিদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বা এফ-কমার্সভিত্তিক উদ্যোক্তারা এখানে এক্সপ্রেস শপ খোলার মাধ্যমে ইভ্যালির ২০ লাখের বেশি  গ্রাহকের কাছে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবেন।

এটা শুধু গ্রাহকদের জন্যই নয়, বরং ব্যবসায়ীদের জন্যও একটি সুযোগ। এই মুহূর্তে শপিং মলে দোকান চালু করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে ব্যবসায়ীরা এক্সপ্রেস শপে তাদের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

প্রিয় শপের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, ‘প্রিয়শপ ডট কম (www.priyoshop.com) গ্রাহককেন্দ্রিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। তাই এই সংকটকালে গ্রাহকদের যেন ঘরের বাইরে বের হতে না হয়, সেজন্য আমাদের টিম কাজ করছে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে।

গ্রাহকদের যে ধরনের পণ্য প্রয়োজন, তেমন পণ্য যেন গ্রাহকরা পেতে পারেন সেজন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রিয় শপের কর্মী বাহিনী।

তিনি আরও জানান, ‘ঈদকে সামনে রেখে  প্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি ফ্যাশন পণ্যের দিকে নজর দিচ্ছে প্রিয়শপ ডট কম। যেন করোনা মহামারির এই সময়ে গ্রোসারির পাশাশাপি ফ্যাশন আইটেমের জন্য ক্রেতাদের বাইরে বের না হতে হয়।’

আশিকুল আলম খান বলেন, ‘ক্রেতাদের ন্যায্য দামে সঠিক পণ্য কেনার নিশ্চয়তা দিচ্ছে প্রিয়শপ ডট কম।ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে প্রিয় শপ অনলাইন কেনাকাটাকে  সহজ করেছে।

ক্রেতারা তাদের সুবিধা মতো প্রিয়শপ ডট কমে অর্ডার দিতে পারে। ওয়েব সাইট, অ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জারে ইনবক্স করে কিংবা কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। বর্তমানে ক্যাশে লেনদেন কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ‘অনলাইন পেমেন্ট’কে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাড়, ক্যাশব্যাক ও ফ্রি ডেলিভারির মতো সুবিধা দিচ্ছে প্রিয়শপ ডট কম।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) জানিয়েছে, সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকা অবস্থায় পোশাক, বই, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও রেস্তোরাঁর তৈরি খাবার অনলাইনে বিক্রির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অনলাইন পোশাক বিক্রেতাদের বিপুল পরিমাণ মজুতের বিষয়ে অবগত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ই-ক্যাব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই নির্দেশনায় ঈদকে সামনে রেখে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য অনলাইন বাণিজ্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

ওই নির্দেশনা অনুসারে রেস্তোরাঁগুলোকে শর্তসাপেক্ষে শুধু খাবারের হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য কিচেন খোলার অনুমতি দেয়। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনলাইনে অর্ডার করা এসব খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিক্রি ও ডেলিভারি করতে বলা হয়।

এদিকে ফ্যাশন হাউজ আড়ং তাদের আউটলেটে কেনাকাটা করতে আসার আগে প্রতিষ্ঠানটির নির্দেশনা জেনে আসতে বলেছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো টাইম স্লট। ক্রেতাকে আগে টাইম স্লট বুকিং দিয়ে আউটলেটে যেতে হবে।

এজন্য প্রথমে লগইন করতে হবে আড়ংয়ের ওয়েবসাইটে (www.aarong.com। সাইটে গিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে টাইম স্লট (ক্রেতার শপিংয়ের তারিখ ও সময়) বুক করতে হবে। এরপর মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে আড়ং কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেবে ক্রেতা কখন শপিংয়ে যাবেন।

নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট সময়ের ১০ মিনিট আগে উল্লেখ করে দেওয়া আউটলেটে হাজির হতে হবে। আউটলেটে প্রবেশের আগে মোবাইলের মেসেজ দেখাতে হবে। তবেই প্রবেশ করা যাবে আউটলেটে।

১০ মে থেকে আড়ংয়ের নির্ধারিত কয়েকটি আউটলেট চালু হবে। এরই মধ্যে টাইম স্লটের বুকিং শুরু হয়েছে। আড়ংয়ের এই সাইট থেকে অনলাইন শপিংও করা যাবে। এবারের ঈদে ঘরে বসে শপিং করার বিশাল আয়োজন রেখেছে আড়ং।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুমের (www.bagdoom.com) ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) আহসান এইচ আমিনুর বলেন, ‘মহামারির এই সময়ে বেশিরভাগ শপিং মল বন্ধ থাকবে।

তাই বাগডুম দিচ্ছে ঘরে বসে শপিং করার সুবিধা। লংকাবাংলা ফিন্যান্স, প্রাইম ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংকের কার্ডহোল্ডার ও রবির ধন্যবাদ গ্রাহকরা কেনাকাটায় পাচ্ছেন ৮ শতাংশ ছাড়। এছাড়া, বাগডুমে রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের হাতে তৈরি পাট ও পাটজাত পণ্য এবং দেশি উদ্যোক্তাদের তৈরি পোশাক।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যাবে না, শুধু হোম ডেলিভারির জন্য এই অনুমতি। যেসব ফুড ডেলিভারি কোম্পানি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বিধিমালা মেনে চলতে অঙ্গীকারপত্র জমা দিয়েছে, শুধু তাদের ক্ষেত্রেই এই অনুমতি প্রযোজ্য বলে জানা গেছে।

প্রযুক্তিপণ্য বিষয়ক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ডিলবাজার ডট কম (www.dealbazaar.com.bd) ঈদ উপলক্ষে নিজেকে সাজিয়েছে স্মার্টফোন আর একসেসরিজ দিয়ে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী দেওয়ান কানন বলেন, ‘স্মার্টফোন নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সব ধরনের একসেসরিজ থাকছে আমাদের সাইটে। ক্রেতাদের জন্য আমরা সর্বোচ্চ অফার নিয়ে আসবো তাড়াতাড়ি’

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার (www.gadgetandgear.com) তাদের অনলাইশন শপ চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী নূরে আলম শিমু বলেন, ‘আমরা এই সংকটেও অনলাইন চালু রেখেছি। লোকবল বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের চেষ্টা আছে ঈদ উপলক্ষে ঢাকার ভেতরে একদিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো।’

তিনি আরো জানান, মোবাইলফোন ও একসেসরিজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের মোবাইল ফোনটি আমাদের সাইট থেকে কিনতে পারবেন।