কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে সরকারি ত্রাণ সহায়তার দাবিতে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। শনিবার (৯ মে) সকালে খাদ্য সহায়তার দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুদ্ধ লোকজন ইউএনওর গাড়িতে হামলা করে। তবে ইউএনও অক্ষত রয়েছেন। ইউএনও ময়নুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, করোনা সংকট মোকাবিলায় চলমান লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। সরকারি সহায়তা পৌঁছালেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। ফলে ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া,ফোলার পাড়, নেপাপর দরগা ও শিবরামসহ কয়েকটি এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুরা খাদ্য সহায়তার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন।
অবরোধকারীদের দাবি, ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে একাধিকবার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি নেওয়া হলেও তাদেরকে কোনও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই তারা ত্রাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। শনিবার দুপুর ১ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ চলছিল।
চাঁদমিয়া, বাদশা ও শহিদুল নামে কয়েকজন অবরোধকারী জানান, তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কর্মহীন হয়ে খাদ্যাভাবে থাকলেও সরকারি কোনও ত্রাণ সহায়তা পাননি। এ অবস্থায় তারা পরিবার নিয়ে খাদ্য কষ্টে ভুগছেন। ফলে একরকম বাধ্য হয়েই তারা ত্রাণের দাবিতে সড়কে নেমেছেন।
জানতে চাইলে কাাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল ইসলাম দুলাল বলেন,‘ ইউনিয়নে তালিকা করে সরকারি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখানে খাদ্যের দাবিতে সড়ক অবরোধ করার মতো কোনও পরিস্থিতি ছিল না। কোনও একটি পক্ষের ইন্ধনে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি যাচাই করতে ইউএনও মহোদয় এলে তার গাড়িতেও পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধকারীদের সাথে কথা বলতে ঘটনাস্থলে যান সদর ইউএনও ময়নুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অবরোধকারীদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তার গাড়িতে হামলা করেন অবরোধকারীরা। এতে তার সরকারি গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙ্গে যায়। পরে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ইউএনও বলেন, ‘ত্রাণের দাবিতে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। তাদের অনেকেই ত্রাণ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু এর মধ্যে কে বা কারা আমার সরকারি গাড়িতে হামলা করে। এতে গাড়িটির পেছনের গ্লাস ভেঙ্গে যায়।’
এ ঘটনায় নিজে অক্ষত আছেন জানিয়ে ইউএনও বলেন, ‘ এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন,‘ ওই ইউনিয়নে ৭ হাজার ৫৪৬ পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ১ হাজার ৩৬১ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী সম্বলিত ৪ শত প্যাকেট বন্টন করা হয়েছে। পরবর্তী খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে খাদ্য সহায়তার চাহিদা না জানিয়ে হঠাৎ করে কেন সড়ক অবরোধ করছে তা বোধগম্য নয়।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মাহফুজার রহমান জানান,‘ সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে। ইউএনও মহোদয়ের গাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পেপার’স লাইফ/চন্দন কুমার সরকার/কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি