ক্রিয়েটিভ রাইটিং এবং কন্টেন্ট রাইটিং এর পার্থক্য, সম্পর্ক কিংবা সংযুক্ততা যেটাই বলি না এগুলো প্রত্যেকটি প্রত্যেকটির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সহায়ক। লেখার কলাকৌশলে ভিন্নতা থাকলেও ক্রিয়েটিভ ব্যপারটা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
রাইটিং বলতে আমরা অনেকেই হয়তো বুঝে থাকি গল্প, নাটক কিংবা যেকোন সৃজনশীল সাহিত্য রচনা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ওটি আসলে রাইটিং এর একটি অংশ মাত্র। রাইটিং এর অনেক মাধ্যম থাকলেও প্রধানত তা দুই প্রকার। এক. ক্রিয়েটিভ রাইটিং এবং দুই. কন্টেন্ট রাইটিং।
ক্রিয়েটিভ রাইটিং হচ্ছে সাহিত্য নির্ভর যে কোন রচনা। সেটি হতে পারে গল্প, উপন্যাস কিংবা নিজের ক্ষুদ্র অনুভূতিতে কোন অনুগল্প। ক্রিয়েটিভ রাইটারের কোন পরিসীমা থাকা চলে না, নেই কোন বাধ্যবাধকতা। কেননা পাঠককে নিজের লেখনীতে ধরে রাখার অদ্ভুত এক ক্ষমতা নিয়েই জন্ম হয় ক্রিয়েটিভ লেখকদের। ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় লেখকের ব্যক্তি অনুভূতিকে কিংবা লেখকের কল্পনা জগতকে। তবে সেই ব্যক্তি অনুভূতি এবং কল্পনার জগতে জড়িয়ে থাকে লেখকের আবেগ, প্রাঞ্জলতা, জীবনের নির্মম বাস্তবতা কিংবা আমাদের নিজেদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
একজন ক্রিয়েটিভ লেখক কখনো একটি চরিত্রের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং গল্পের বৈচিত্র্যে লেখকেরও চরিত্রের বদল ঘটে। একজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে ভিতর খুব সহজেই ঢুঁকে যায় লেখক। আবার একই গল্পে ঐ লেখকই হয়ে ওঠে একজন মমতাময়ী মা। এটাই মূলত একজন ক্রিয়েটিভ লেখকের পরিচয়। যে কিনা নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকেও অনেক বেশি হয়ে ওঠে ভিন্ন কোন চরিত্রের। তবে সব গল্পই যেমন সার্থক গল্প নয়, তেমনি সব চরিত্রই সার্থক চরিত্র হয়ে ওঠে না।
একজন ক্রিয়েটিভ লেখকের চরিত্র সৃষ্টির পাশাপাশি করতে হয় চরিত্রের সুসম বণ্টন। যা দিয়ে একটি চরিত্র অন্য চরিত্র থেকে আলাদা হয়ে ওঠে। একই সাথে একটি চরিত্র সার্থক চরিত্র তখনই হয়ে ওঠে যখন সেই চরিত্রের সংগ্রাম হয় সমাজের অনাচার-বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিংবা সংগ্রাম হয় বৈরী পরিবেশে একটু বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য, একটু খাওয়ার জন্য। ক্রিয়েটিভ লেখককে ধরা হয় সমাজ এবং দেশের সংস্কৃতি বদলের হাতিয়ার। কেননা, একজন ক্রিয়েটিভ লেখকের প্রকাশিত লেখার মধ্য দিয়েই পাঠক কিংবা দেশের সচেতন জনগণ জানতে পারে সেই সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি। লেখক এবং পাঠকের মাঝে মাধ্যম দিয়ে ব্যবহৃত হয় বই, পত্র-পত্রিকা কিংবা নাটক-সিনেমা।
অন্যদিকে কন্টেন্ট রাইটিং হচ্ছে কোন একটি স্পেশাল উদ্দেশ্যে কন্টেন্ট তৈরি করা। এটাকে মুক্ত আলোচনা বললে ভুল হবে। এটাকে কেউ কেউ টেকনিক্যাল রাইটিংও বলে থাকেন। মূলত কোন একটি পণ্যের কিংবা কোন একটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জানার উদ্দেশ্যে যে লেখনীটি তৈরি করা হয় সেটাই কন্টেন্ট রাইটিং। এটাকে কেউ কেউ ওয়েব রাইটিংও বলে থাকে।
কন্টেন্ট রাইটার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো একটি কোম্পানির মার্কেটিং প্রতিনিধির সাথেই কাজ করে থাকেন। কন্টেন্ট রাইটারের কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হয় পণ্যের বিশেষত্ব তুলে ধরা। যাতে কন্টেন্ট রাইটারের লেখা পড়ে একজন ক্রেতা বাজারে অন্য প্রোডাক্ট থাকা সত্ত্বেও তার ঐ পণ্যটি কিনতে আকৃষ্ট হয়। এটাই একজন কন্টেন্ট রাইটারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং।
কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে আরেকটি অধিকতর গুরুত্বের দিক হচ্ছে কিওয়ার্ডস। এখন হয়তো অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে কি-ওয়ার্ড কী? এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরা যাক, একটি নতুন কোম্পানির চানাচুর আমি বাজারজাত করবো। আমার এই চানাচুরটির বিশেষত্ব হচ্ছে ‘হট এন্ড স্পাইসি’। এই ‘হট এন্ড স্পাইসি’ আমার চানাচুরের কিওয়ার্ডস। আবার অনেক ক্ষেত্রে কন্টেন্ট রাইটারদের নিজেদেরই তৈরি করতে হয় তার পণ্যের কী-ওয়ার্ডস।
যেমন যদি আমি এই নতুন চানাচুরটি কিওয়ার্ডস হিসেবে রাখি এই চানাচুরটির সাথে শুধু বাদাম নয়, আপনি পাচ্ছেন ছোলাও। যা আপনার চানাচুরের ফ্যাট তুলনামূলকভাবে অনেক কমিয়ে দিবে। সুতরাং একই দামে আপনি পাচ্ছেন চানাচুর-বাদাম এবং ছোলার মিশ্র স্বাদ। এক্ষেত্রে কোম্পানির খরচ কমাতে আমি হয়তো বাদামের পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কমিয়ে দিতেই পারি।
আবার শিক্ষা বিষয়ক কোন কন্টেন্ট লেখার ক্ষেত্রে আমার কিওয়ার্ডস হবে স্ট্যাডি, এডুকেশন, ক্যারিয়ার। যাতে করে গুগলে এসব সার্চ করলে উপরের সারির দিকেই আমার আর্টিকেলটি এসে পড়তে পারে। কন্টেন্ট রাইটিং এর পরিধি খুব সীমিত। কেননা এখানে পণ্যের বর্ণনা দেয়া হয়, সুতরাং ক্রেতা কখনোই আপনার বর্ধিত লেখা পড়তে আকৃষ্ট হবে না। বরং খুব অল্প কথাতেই আপনার কার্যসিদ্ধি করতে হবে কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে।
এবার আসি কন্টেন্ট রাইটিং এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর মিলগুলো কোথায়? এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দুটোর ট্যাগলাইনই কিন্তু রাইটার শব্দটি রয়েছে। সুতরাং যে কেউ চাইলেই হুট করে যে কোন কিছুর উপর কন্টেন্ট লিখে ফেলতে পারে বিষয়টি আসলে তেমন নয়। কেননা কন্টেন্ট লেখার ক্ষেত্রেও আপনাকে এমন কিছু কিওয়ার্ডস বা স্পেশাল কিছু শব্দ কন্টেন্টে রাখতে হবে যাতে আপনার পণ্যের কিংবা বিষয়ের ক্রেতা আপনার ঐ বিষয় বা কন্টেন্টের প্রতি আগ্রহবোধ করে। যেটা তৈরি করা একজন ক্রিয়েটিভ এবং দক্ষ লেখকের পক্ষেই সম্ভব।
কন্টেন্ট রাইটার এবং ক্রিয়েটিভ রাইটার উভয়কেই প্রচুর রিসার্চ করতে হয়,পড়তে হয়। একজন কন্টেন্ট রাইটার রিসার্চ করে মার্কেট কিংবা তার ক্লাইন্টের মন মানসিকতা বুঝেই লিখতে হয় পণ্যের কন্টেন্ট। অন্যদিকে ক্রিয়েটিভ রাইটারও পাঠকদের মন মানসিকতা বুঝে সাহিত্য তৈরি করেন।
পরিশেষে, কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে অনেক বেশি টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হয় এবং সঠিক কিওয়ার্ডস ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করেই পণ্য কিংবা বিষয়ের কন্টেন্ট লিখতে হয়। অপরদিকে ক্রিয়েটিভ রাইটিংএ লেখকের থাকবে অসীম কল্পনা এবং বাস্তব জ্ঞানের সমন্বিত রূপ। যা তার লেখনীর দক্ষতায় আমার-আপনার সকলের গল্পই হয়ে উঠবে।
পেপারস লাইফ/মোহাই মেনুল নিয়ন