করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় যে ওষুধটিকে সবচেয়ে বেশি কার্যকার হতে পারে, সেই ‘রেমডেসিভির’-এর উৎপাদন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। বেক্সিমকো, এসকে-এফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার, বিকন, হেলথকেয়ার, অ্যাকমি ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস – এই কোম্পানিগুলোকে ওষুধ তৈরির অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এই মাসের মধ্যেই হয়তো তারা ওষুধটি বাজারে ছাড়বে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত এই ওষুধ সাধারণ মানুষের কতটা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এসকে-এফের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এসকে-এফের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘ওষুধটি ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। যেসব রোগীর অবস্থা গুরুতর, তাদের পাঁচ দিন ও দশ দিন এই দুই ধরনের মেয়াদে বা কোর্সে ওষুধটি প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কর্তৃপক্ষ। পাঁচ দিনের মধ্যে যাদের রোগ সারবে না, তাদের ক্ষেত্রে দশ দিনের কোর্সের পরামর্শ দেওয়া হবে। যারা পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা নেবেন তাদের জন্য রেমডেসিভিরের ৬টি ভায়াল, আর দশ দিনের চিকিৎসা নেওয়াদের ক্ষেত্রে ১১টি ভায়াল প্রয়োজন হবে। প্রতিটি ভায়ালের দাম হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। অর্থাৎ যারা পাঁচ দিন চিকিৎসা নেবেন তাদের রেমডেসিভির ওষুধ কিনতে খরচ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর যারা দশ দিন চিকিৎসা নেবেন তাদের খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকার মতো।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ সরবরাহের পরিকল্পনা থাকলেও পরে বেসরকারি পর্যায়েও বাজারজাতকরণের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে যেন এই ওষুধের বিপণন করা হয়, আমরা সেই পরামর্শ দিয়েছি। তবে তার মানে এই নয় এটি বেসরকারিভাবে দেওয়া যাবে না। নিয়ন্ত্রিতভাবে এই ওষুধ বাজারে ছাড়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এটি সরবরাহ করতে পারবে। তবে ফার্মেসিতে খুচরা কিনতে সেভাবে পাওয়া যাবে না।’
এদিকে যেহেতু রেমডেসিভির বেশ উচ্চ মূল্যের ওষুধ হবে, তাই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে তা থাকবে কিনা, সেটি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
রেমডেসিভির ওষুধটির পেটেন্ট যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গিলিয়েড সায়েন্সেসের। ওষুধটি প্রথমে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, নোভেল করোনা ভাইরাসসহ আরও কিছু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে যেভাবে বংশবৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্ষতগ্রস্ত করে, সেই প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও থামানোর সক্ষমতা আছে এই ওষুধের।
এমন গবেষণার তথ্য গিলিয়েড সায়েন্সেস প্রকাশ করার পর গত সপ্তাহে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের জরুরি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, এই ওষুধের প্রয়োগ বেশি অসুস্থদের হাসপাতালে থাকার সময়কাল চার দিন পর্যন্ত কমাতে পারে।