আন্তনগর ট্রেনগুলোতে আজ বুধবার থেকে শুরু হলো ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতি নিয়ে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যাত্রীকে আগে নিজের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একটি নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর তিনি কাউন্টার ও অনলাইন থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বলে আসছিল এই পদ্ধতিতে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হবে। তবে উদ্বোধনের দিন কালোবাজারি বন্ধে নতুন পদ্ধতি কতটুকু ভূমিকা রাখবে—এমন প্রশ্নে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘টিকিট কালোবাজারি পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না, জানি না। তবে আমরা চেষ্টা করছি অন্ততপক্ষে টিকিট কালোবাজারি যাতে হতে না পারে।’ আজ বুধবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে নতুন এই পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য পজ মেশিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন :
নতুন এই পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে বেশ জটিলতায় পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। এই পদ্ধতির জন্য রেলওয়ে ও যাত্রীরা কতটুকু প্রস্তুত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল শুরু করেছি। ধীরে ধীরে সবকিছুই বাস্তবায়ন হবে। যাত্রীসাধারণও অভ্যস্ত হবে।’ কমলাপুর স্টেশনে একটি মাত্র নিবন্ধন বুথ, এতে যাত্রীদের পুরোপুরি সহায়তা সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখে এসেছি একটি মাত্র নিবন্ধন সহায়তা বুথ। এটা বাড়ানো হবে।’
আপাতত ৮২টি স্টেশন থেকে এই পদ্ধতিতে টিকিট সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। গত ১৫ দিনে ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম তারিখ দিয়ে ৪ লাখ মানুষ নিবন্ধিত হয়েছেন। তবে দেশের মানুষের শিক্ষা ও আইটি জ্ঞান কম থাকায় শতভাগ সফলতা আসতে বিলম্ব হতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার লক্ষ্য ও সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে। প্রয়োজনে যাত্রীদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোনো যাত্রী টিকিট পাবেন না। প্রাথমিকভাবে আন্তনগর ট্রেনে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরে এটি বিস্তৃত করা হবে।’
এর আগে একজনে ৫টা বা ১০টা টিকিট কেটে কালোবাজারি করে বিক্রি করা যেত। অন্যের টিকিট নিয়েই অনেকে ভ্রমণ করতে পারত। এখন সেটা পারবে না। আর বিনা টিকিটে কেউ ভ্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন মন্ত্রী। তবে এমন হুঁশিয়ারির পনেরো মিনিট পরেই দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। পজ মেশিন হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ-অনুযোগ শোনার জন্য তিনি কমলাপুর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রংপুর এক্সপ্রেসের দুটো বগি পরিদর্শন করেন। এসব বগিতেই ছিল টিকিট ছাড়া অনেক যাত্রী। মন্ত্রীর সামনেই টিকিটবিহীন যাত্রীদের অন্যত্র সরিয়ে দিতে দেখা যায় টিটিইকে।
সকাল সাড়ে ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেসের ‘খ’ বগিতে মন্ত্রী প্রবেশের সময় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার ও দুজন ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক-টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের অন্য বগিতে পাঠিয়ে দেন। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো বাস্তবায়নের বিষয়, কতটুকু ইমপ্লিমেন্ট করতে পারব সেটাই বিষয়। আমরা শুরু করলাম মাত্র।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কমলাপুর থেকে অনেক যাত্রী বিমানবন্দর স্টেশনে যায়। তারা কীভাবে ওঠে এটা বোঝা যায় না। স্ট্যান্ডিংয়ের জন্য আলাদা বগি না থাকলে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়।’