বর্তমানের সাথে কতটা মিলেছে কার্ল মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণী


বর্তমানের সাথে কতটা মিলেছে কার্ল মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণী


কার্ল মার্ক্স; জার্মান সমাজ বিজ্ঞানী ও মার্ক্সবাদের এই প্রবক্তাকে নিয়ে রয়েছে বিশ্বজুড়ে নানা বিতর্ক। চীনের সরকারব্যবস্থা পরিচালিত হয় মার্ক্স তত্ত্বকে অনুসরণ করে; অপরদিকে নিজের জন্মভূমিতে তিনি বিরাগভাজন।

সমাজ এবং পুঁজিবাদ সম্পর্কে নিজের বিখ্যাত তত্ত্বের জন্য মার্ক্সের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া। সেই সঙ্গে তিনি পুঁজিবাদ সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যদ্বানীও করেছিলেন। আজ দেখব থিক কতটা সত্যি হয়েছে মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণী।

‘মধ্যবিত্তের সংকোচন’
কার্ল মার্ক্স বলেছেন, পুঁজিবাদের ধরণ অনুযায়ী মুনাফার জন্য বড় ব্যবসায়ীরা কর্মীদের বেতন ও সুবিধাদি কমিয়ে দেয়। এতে মধ্যবিত্ত ক্রমে গরীব হতে থাকে। এর ফলে একটি বড় অংকের নগদ অর্থ অল্প কিছু মানুষের হাতে জমতে থাকে।
আজকের পৃথিবীতে তিন শো সত্তুর কোটি মানুষের যা সম্পদ, তার চেয়ে বেশি সম্পদ আছে মাত্র ৪২ জন ধনী মানুষের হাতে। সে হিসেবে চীন, ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা তিন শো সত্তুর কোটি।

‘কাল্পনিক চাহিদা’ তত্ত্ব
মার্ক্স বলেছিলেন পুঁজিবাদ এমন সব জিনিস তৈরি করবে, যা মানুষের দরকার নেই, কিন্তু তারপরেও সে বস্তুর চাহিদা তৈরি হবে। একেই তিনি ‘কাল্পনিক চাহিদা’ বলে নাম দিয়েছিলেন।
আবার ধরা যাক, ফ্যাশন। চলতি হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে কাপড়-চোপড় পরতে গিয়ে আমরা এমন সব কাপড়-চোপড় ফেলে দিচ্ছি যেগুলো আসলে এখনো ব্যবহার করা যায়। লাগাতার স্মার্টফোন বদলের ক্ষেত্রেও এই তত্ত্ব প্রমাণিত।

‘উত্থান এবং পতন’ তত্ত্ব
পুঁজিবাদের পতন সম্পর্কে মার্ক্স আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, লাভের জন্য পুঁজিবাদের যে তীব্র ক্ষুধা, সেজন্য বিশ্বে মানুষের যা প্রয়োজন তার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হবে। এবং শ্রমিকের মজুরি এতই কমবে যে তারা নিজেদের উৎপাদন করা পণ্য কিনতে পারবে না। আর মানুষ পণ্য না কিনলে পুঁজিবাদীরা মুনাফা করবে কিভাবে? যে কারণে পুরো ব্যবস্থা ব্যর্থ হতে শুরু করবে।
পুঁজিবাদের প্রকৃতিই হচ্ছে এটি ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি‘ আর ‘মন্দা’র মধ্যে ঘুরপাক খায়। সেই অর্থে ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মতই হয়েছে।

‘একাধিপত্য’
সাধারণ অর্থে পুঁজিবাদের বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার কথা। যেমন পাড়ার মাংস ও মাছ বিক্রেতার মত ছোট ব্যবসা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। কিন্তু মার্ক্স বলেছেন, কোম্পানিগুলো এত বড় হতে থাকবে যে তারা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্রমে গ্রাস করে নেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মনে করে দেখুন তো, বড় সুপার মার্কেট চেইন রেখে কে কবে পাড়ার ছোট দোকানটিতে ঢুকেছেন?

বিপ্লব?
কার্ল মার্ক্সের সবচেয়ে বড় তত্ত্ব ছিল পুঁজিবাদ নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে। তিনি বলছেন, যখন সবাই বুঝতে পারবে যে এই পদ্ধতিতে গলদ আছে, তখন তারা নিজেরাই বিদ্রোহ করে বিপ্লব ঘটাবে। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবে ঘটেনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কম্যুনিস্ট আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিপ্লবের অনেক নজির আছে।