বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি ব্যয়ের ফর্দ তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী। টাকার ওই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।
অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের উপর থেকে যেমন কর ও শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে; তেমনি বিভিন্ন পণ্যের উপর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে শুল্ক কর মওকুফের সুবিধা।উত্থাপিত বাজেটের এসব প্রস্তাব পাস হলে এসব পণ্যের দাম ওঠানামা করতে পারে।
দাম কমতে পারে যেসব পণ্যেরঃ
মুড়ি ও চিনির উপর ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। গমের আটার উপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি, চার্জার ও ইন্টারেকটিভ ডিসপ্লে এর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত হুইল চেয়ার আমদানিতে বিদ্যমান সকল ধরনের শুল্ককর বিলোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের পড়ার উপকরণ ব্রেইল মুদ্রণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য কানে শোনার যন্ত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারি এর ওপর প্রযোজ্য শুল্ক কর হ্রাস করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
দেশে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত শিল্প বিকাশ ও নতুন রপ্তানি খাত সৃষ্টির লক্ষ্যে কাঁচা কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পাওয়ার টিলার উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এম এস প্রোডাক্টের ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট প্রতি মে. টন ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ব্যাগ (ওভেন প্লাস্টিক ব্যাগসহ) ও মোড়ক সামগ্রীর ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের দাম কমতে পারে।
এসি ও নন-এসি সব ধরনের রেস্তোরাঁর ওপর মূসক হার ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশের পরিবর্তে উভয় ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নিবন্ধিত হাঁস-মুরগির খামারের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। গোখাদ্যের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সুগারকেইন মোলাসেস’র ওপর আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পয়ঃশোধনাগারের জন্য আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়ছে।
কাঠের বাড়ির আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যেরঃ
মোবাইল টেলিফোন সেটের ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। দেশীয় উৎপাদিত সেলুলার ফোন উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে মোবাইল ফোন ব্যাটারি চার্জারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কম্পিউটার, প্রিন্টার ও টোনার কার্ট্রিজ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার হবে ৩১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার
কোভিড-১৯ এর টেস্ট কিট, প্রটেকটিভ গার্মেন্টস, ফেইস শিল্ড, মেডিকেল প্রটেকটিভ গিয়ার, প্রটেকটিভ চশমা এবং মাস্ক এর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
জিআই ফিটিংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দেশে গড়ে উঠেছে। তাই দেশি শিল্পের প্রতিরক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য আমদানি করা জিআই ফিটিংসের বিপরীতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাটারের মতো চিজ আমদানিতেও ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের ওয়্যার প্রায় সমজাতীয় হওয়ায় শুল্কায়নকালে এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা দূরুহ। তাই সমতা বিধানের স্বার্থে এরূপ দুটি পণ্য আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ও টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। তাই ২৫০ সিসির ঊর্ধ্বের ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ ও টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি করা বেশিরভাগ মোটরগাড়ি ও জিপের উপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে ৭৫০ ওয়াট পর্যন্ত ইলেকট্রিক মোটরের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে অব্যাহতি প্রত্যাহারপূর্বক ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবিধা আগামী অর্থবছর পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের জন্যে গ্যাস লাইটার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে পার্টস অব লাইটার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশি সৌর বিদ্যুৎ খাতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি করা সোলার প্যানেলের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ০ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কনক্রিট রেডি মিক্সের উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের জন্য প্রিন্টিং কালি পণ্যের রেয়াতি শুল্কহার ১০ শতাংশ এর পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে বিলাসবহুল পাখির ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। এই হার বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানো ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর কথা বলে বাজেটে সিগারেটের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফি আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।