রান্নাঘরে মায়ের বানানো খাবার চেখে দেখার অভ্যাস সব মেয়েদেরই আছে। রাফিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। মায়ার বানান রান্না দেখতে দেখতে তার ইচ্ছা হলো সেই মায়ের একটা রেসিপি হুবহু বানাবে।
আরেক দিন বিকেলে মাকে বলল, ‘আম্মু! আজ আমি সবার জন্য পাস্তা বানাব।’ মা-ও রাজি। রাফিয়ার বানানো পাস্তা খেয়ে সবাই খুব প্রশংসা করল। ব্যস, রান্নার উৎসাহটা স্থায়ী হলে গেল।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়া বড় আপুও রাফিয়ার রান্নায় আগ্রহ দেখে অনুপ্রেরণা দিতেন, সাহায্য করতেন নতুন নতুন রেসিপি বানাতে।
এভাবেই চলছিল দিন। একদিন ছোটদের রান্নাবিষয়ক রিয়ালিটি শো ‘তীর লিটল শেফ সিজন ২’ এর বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে মা অংশ নেওয়ার কথা বলেন।
যেই কথা সেই কাজ! সেখানে অংশ নেয় রাফিয়া। অডিশনে রান্নাবিষয়ক বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সেখানে ভালো করে রাফিয়া। ভাইভাতেও তার রান্না নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর শুনে বিচারকরা মুগ্ধ। চট্টগ্রাম জোন থেকে নির্বাচিত চারজনের একজন রাফিয়া। ঢাকায় ধাপে ধাপে বিভিন্ন পর্ব শেষে গ্র্যান্ড ফিনালেতে পৌঁছে।
গ্র্যান্ড ফিনালেতে ‘টমেটো ক্রিম স্যুপ উইথ ক্রুটনস’ নামে একটি রেসিপি বানিয়েছে। যাতে মুগ্ধ হয়ে বিচারকরা তাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে সবাই কল দিচ্ছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। অনেকে আম্মুকে ফোন দিয়েও শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।’ রাফিয়ার পছন্দের রেসিপি পিৎজা, ব্রাউনি।
প্রতিযোগিতা ঘিরে কত মজার স্মৃতিই না আছে, ‘লিটল শেফের বন্ধুরা সবাই একদিন বার্গার অর্ডার করেছিল। আমাকে দিয়েছিল নাগা বার্গার। খেয়ে তো অবস্থা কাহিল। ঝালে মুখ পুড়ে যাচ্ছিল। তা দেখে ওদের যে কী হাসি! পরে অবশ্য চিনির শরবত বানিয়ে দেয় ওরা। লিটল শেফে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।
এই খুদে শেফ ইন্ডিয়ান, চায়নিজ, থাই, বাংলা খাবার বানাতে পারদর্শী। কথায় কথায় জানাল, ভবিষ্যতে একটি রেস্টুরেন্ট দেওয়ার ইচ্ছা আছে। তার ঝুলিতে বিতর্ক, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কারও রয়েছে। বিজ্ঞান ও গণিত অলিম্পিয়াড, উপস্থিত বক্তৃতা, অভিনয়সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করছে নিয়মিত। পড়াশোনাও চলছে সমান তালে।
এখন পড়ছে চট্টগ্রামের সিলভার বেলস কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে। রাফিয়ার বাবার নাম সফিউল আলম, মায়ের নাম সুলতানা আলম। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ। বড় হয়ে কাজ করতে চায় নাসায়।