একজন মানুষিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষ। রাজধানীর রাস্তার ঘুরে ঘুরে কাটে দিন, জোটে মানুষের দেয়া খাবার। এভাবেই চলে নাম না জানা এই মানুষটির জীবন। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে তার জীবনেও। লকডাউনে সব বন্ধ। তাই ভাগ্যে জোটেনি এক মুঠো ভাত। ৬/৭ দিন ভাত খাওয়া হয়নি।।
অনেকের কাছে ভাত খেতে চেয়েছে, কিন্তু যার মনে মায়া জন্মেছে, ৫/১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। ভাত জোটেনি ভাগ্যে। ভাতের খোঁজে ক্লান্ত শরীরে ঘুরতে ঘুরতে শুধু হতাশাই জন্মেছে।
স্থানীয় বাজারে কেউ হয়তো তাকে বলে দিয়েছে, মিলটনের কাছে যা ভাত খেতে দিবে। ঘুরতে ঘুরতে ঠিকই সে আমার লোকেশনে চলে এসেছে। এসেই হাঁকডাক শুরু মিলটন কই? মিলটনের কাছে গেলে ভাত পাবো।
বিষয় হলো মিলটন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে পারলেই পেট ভরে ভাত খেতে পারবে। কত ‘ভরসা’। হয়তো চাহিদাটা খুবই কম, তবে ভরসাটা অনেক বড়।
কারণ একজন মানুষিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মানুষের আমার কাছে আসা এক মুঠো ভাতের আকুলতা আমি দেখছি, চোখেমুখে ভরসা ছিলো, নির্ভরতা ছিলো।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গেটে ঠুকতেই বাধা পড়লো। চেঁচিয়ে বললো, শুধু একবার মিলটন কে ডাক, আমাকে ভাত খেতে দিবে, মিলটন ভাত দেয়। মানুষ কতটুকু ক্ষুধা লাগলে একজনের উপরে ভরসা করে খুঁজতে খুঁজতে ঠিকানায় আসে।
ভাত খাওয়ার পরে হাতে কিছু টাকা দিতে চাইলাম, টাকা নিলো না, বললো টাকা লাগবে না, টাকা কোনো সমস্যা না, টাকা রাস্তায় পাওয়া যায়, শুধু ভাত পাওয়া যায় না। ভাত খেয়ে বললো, ‘যাউক আবারও এক মাস বেঁচে থাকা যাবে।’ কত অসহায় হলে একবার ভাত খেয়ে একমাস বাঁচার আকুতির স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ করে!
আমাদের আশেপাশে একই অবস্থায় শত মানুষ রয়েছে, ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সকলের কাছে অনুরোধ রইলো, যদি সম্ভব হয়ে আপনার সাধ্যমত এই সকল মানুষকে সহযোগিতা করবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মানুষ গুলো সত্যি কষ্টে রয়েছে।
বর্তমানে পরিস্থিতির জন্য বাসায় বা রুমে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কারণ, শত চেষ্টা করলেও ওকে বাসায় রাখা যাবে না, ও রাস্তা চলতে শুরু করবে। আবারও এক মুঠো ভাতের ক্ষুধা নিয়ে, কোনো এক মানুষের বাসার গেটে দাঁড়াবে।
লেখক: মিলটন সামাদ্দার
স্বত্বাধিকারী: চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার