ইউক্রেনে বেসামরিক এলাকায় বোমা ফেলে, বেসামরিক মানুষজনকে অত্যাচার, যৌন নির্যাতন ও হত্যা করার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করেছে রাশিয়া। যুদ্ধের সাত মাসের পরে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে এমন দাবিই করেছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।
শুক্রবার যুদ্ধাপরাধবিষয়ক তদন্তকারী দলের প্রধান এরিক মোজ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে তাঁদের অভিমত জানিয়েছেন।
এরিক বলেন, “তদন্ত কমিশন যেসব তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে, তার আলোকে বলা যায়, ইউক্রেনে রুশবাহিনীর দ্বারা বড় ধরনের যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের প্রধান এরিক মোজ বলেছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের বেসামরিক স্থাপনা ও জনবহুল এলাকায় হামলা চালিয়েছে, বোমা ফেলেছে। এসব ঘটনায় বেসামরিক মানুষজনের প্রাণ গেছে। তাঁরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইনে যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
পরিষদকে এরিক মোজ আরও জানান, তাঁরা তদন্তের কাজে ইউক্রেনের যেসব এলাকা ভ্রমণ করেছেন, সেখানে রুশ বাহিনীর দ্বারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক মানুষকে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। অনেকের মাথায় গুলি করা হয়েছে। অনেককে গলা কেটে হত্যা করেছে রুশবাহিনী।
আরও পড়ুনঃ দ. সুদানের শিবিরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের প্রতিবেদন চেয়েছেন গুতেরেস
ইউক্রেনের ১৬টি শহর ও বসতিতে রুশবাহিনীর পরিচালিত এমন হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করছে জাতিসংঘ। এরিক মোজ জানান, এ ছাড়াও ইউক্রেনের আরও অনেক জায়গায় রুশবাহিনীর আইনবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। এসব অভিযোগের নথিপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে।
জাতিসংঘের তদন্তকারীর এমন অনেক বুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন, যাঁরা রুশবাহিনীর দ্বারা সরাসরি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেককে নির্যাতনের পর বন্দী করে রাশিয়ার কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। বন্দী হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর মুক্তি পান তাঁরা। তবে অনেকেই নির্যাতনের পর গুমের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে, এমনটাই জানিয়েছেন এরিক মোজ।
এ ছাড়া ইউক্রেনে রুশ সেনাদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ জাতিসংঘের তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এরিক মোজ জানান, ভুক্তভোগী শিশু ও নারীদের বয়স ৪ থেকে ৮২ বছরের মধ্যে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত শেষ হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনতে পারবেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা।
জাতিসংঘের তদন্তকারী ব্যক্তিরা যখন রুশ যুদ্ধাপরাধ নিয়ে নিজেদের অভিমতের কথা জানিয়েছে, ঠিক তখনই ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্বাঞ্চলের ইজিয়াম শহরে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। এই গণকবরে ৪৩৬ জনের মরদেহ রয়েছে।
উল্লেখ্য ইউক্রেন যুদ্ধে রুশবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ খুঁজতে গত মে মাসে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল গঠন করে জাতিসংঘের কাউন্সিল অব ইনকোয়ারি (সিওআই)। এই দলের তিনজন তদন্তকারী গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে প্রথমবার মৌখিকভাবে তাঁদের অভিমত জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও দেশটির চেরনিহিভ, খারকিভ ও সুমি অঞ্চলে বিভিন্ন ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসব অঞ্চলে রুশবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। এখন তাঁরা আরও বিস্তারিত তথ্য–প্রমাণ খুঁজছেন।