চীনে উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ন গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে মনে করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন তারা নির্যাতনের গ্রহণযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক বন্দীদের সঙ্গে অপরাধমূলক আচরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে “যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা” রয়েছে। কেউ কেউ জোরপূর্বক “পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির বৈষম্যমূলক প্রয়োগের” শিকার হয়েছেন।
জাতিসংঘ বলছে, বেইজিংয়ের কিছু পদক্ষেপ “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সহ আন্তর্জাতিক অপরাধ” হিসাবে গণ্য হতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে চার বছর দায়িত্বে থাকার পর তার মেয়াদের শেষ দিনে মিশেল ব্যাচেলেটের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। কিছু পশ্চিমা মানবাধিকার গোষ্ঠী অভিযোগ করে যে প্রতিবেদন থেকে কিছু গুরুতর অভিযোগ চেপে যাওয়ার জন্য বেইজিং অনুরোধ করছে। এমনকি প্রতিবেদনটি প্রকাশের শেষ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেও চীন ব্যাচেলেটকে এটি প্রকাশ না করার জন্য চাপ দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট স্বীকার করেন যে তিনি এই প্রতিবেদনটি ‘প্রকাশ করা বা না করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন’।
কিন্তু তিনি প্রতিবেদনটি দেরিতে প্রকাশ করা সম্পর্কে যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রতিবেদনটি নিয়ে বেইজিংয়ের সাথে আলাপ করার অর্থ এই নয় যে তিনি এর বিষয়বস্তু “না দেখার ভান” করেছেন।
আরও পড়ুন: যিশুর বদলে রাখতে হবে চীনের প্রেসিডেন্টের ছবি!
অবশ্য উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ন কেন্দ্রীক অভিযোগ অস্বীকার করে বেইজিং এটিকে পশ্চিমা শক্তির সাজানো একটি “প্রহসন” বলে অভিহিত করেছে।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে চীন বলছে, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং ইসলামী চরমপন্থার মূলোৎপাটনে জিনজিয়াং অভিযান জরুরী এবং এই শিবিরগুলি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বন্দীদের সংস্কারের একটি কার্যকর হাতিয়ার। উইঘুর জঙ্গিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক প্রচারণা চালাতে বোমা হামলা, নাশকতা এবং নাগরিক অস্থিরতার পরিকল্পনা করেছে। তবে উইঘুরদের দমনকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য চীন এসব হুমকি অতিরঞ্জিত করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উইঘুর সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কমানোর জন্য তাদের উপর কৃত্রিম বন্ধ্যত্ব পদ্ধতি বলপূর্বক চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগকে চীন “ভিত্তিহীন” এবং “সম্পূর্ণ বানোয়াট” বলে উল্লেখ করেছে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ উইঘুর মুসলমান বাস করে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রদেশে ১০ লাখের বেশি মুসলিমকে ক্যাম্পে আটকে নিয়মিত নির্যাতন করা হয়।