ওপেকের সিদ্ধান্তে খেপেছে বাইডেন প্রশাসন


ওপেকের সিদ্ধান্তে খেপেছে বাইডেন প্রশাসন


জ্বালানি তেলের উৎপাদন দিনে দুই লাখ ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্বের প্রধান তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। নতুন এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমা দুনিয়ায়, বিশেষ করে আমেরিকায় উদ্বেগ এবং ক্ষোভ তৈরি করেছে।

রাশিয়াও এই জোটের অন্যতম প্রধান সদস্য হলেও বাইডেন প্রশাসন তাদের ক্রোধের প্রধান লক্ষ্যবস্তু করেছে সৌদি আরবকে। বিশ্বের এক নম্বর তেল উৎপাদক হিসাবে সৌদিরাই ওপেক প্লাসের যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রধান নিয়ন্তা।

ইউক্রেন যুদ্ধর জেরে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবররাহ প্রায় বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনার মুখে এই শীতে অবস্থা কী দাঁড়াবে – তা নিয়ে ইউরোপের সরকারগুলো গভীর শংকায় ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমা এবং পরিণতিতে আরেক দফা দাম বাড়ার নিশ্চিত সম্ভাবনাকে তারা মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখছে।

যদিও ওপেক বলছে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে নভেম্বর থেকে, কিন্তু বুধবারের সিদ্ধান্ত জানার সাথে সাথেই অপরিশোধিত তেলের বাজারে দাম চড়তে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বব্যাপী পর্যটক সংখ্যা বেড়েছে: জাতিসংঘ

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় মি বাইডেন যে সৌদি সরকারকে বিশ্বে অচ্ছুৎ বানিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই তিনি ১৫ই জুলাই জেদ্দায় গিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বৈঠক করে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করেন। এছাড়া জুলাইয়ের শেষে সৌদি যুবরাজকে প্যারিসে ইলিসি প্রাসাদে সাড়ম্বরে সম্বর্ধনা দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ । একই অনুরোধ নিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর রিয়াদে গিয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ।

গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন টেলিফোন করে কথা বলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে। অবশ্য এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই বোঝা গেল সৌদিরা এসব দাবিতে আদৌ কান দেয়নি।

এমনকি বুধবার ভিয়েনায় ওপেক প্লাস জোটের বৈঠকে তেলের উৎপাদন হ্রাসের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে মাত্র ৩০ মিনিটে। তার অর্থ, ২৪টি দেশের জোটে এই প্রস্তাব নিয়ে কোনো মতবিরোধই ছিলনা।

মার্কিন কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিকরা খোলাখুলি বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে দলাদলিতে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে সৌদি আরব।

ওপেকের সিদ্ধান্ত জানার পরপরই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক ব্রায়ান ডিজ এক যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট খুবই হতাশ। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওপর ওপেকের নিয়ন্ত্রণ খাটো করতে কী কী করা যেতে পারে – তা নিয়ে কংগ্রেসের সাথে সরকার কথা বলবে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে তাদের এক রিপোর্টে বলেছে বাইডেন প্রশাসন এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের বাজারে সৌদি প্রভাব কমানোর উপায় খোঁজা শুরু করেছে।

বিশ্লেষকরা মলে করছেন, সৌদি অর্থনীতি এখনও মূলত তেলের ওপর নির্ভরশীল। গত কয়েক মাস ধরে, বিশেষ করে বাইডেনের জেদ্দা সফরের পর থেকে তেলের দাম কমছিল, তাতে সৌদি আরব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। যুবরাজ মোহামেদ তার দেশের জন্য যে উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছেন তাতে অর্থ জোগাতে তেলের বাজার চাঙ্গা রাখা সৌদি আরবের জন্য খুবই জরুরী।

ওপেক প্লাসের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে তাদের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নয়। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতির এবং তেলের বাজারে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সেই বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত।