খুলনায় অত্যাচারী ৩ ভাইয়ের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী


খুলনা, Khulna District #paperslife


বছর ১৫ আগেও ওরা সাধারণের মতো কাজ করে জীবন যাপন করতো। হঠাৎ কী এমন আলাউদ্দিনের প্রদীপ পেলো, যে বাড়ি-গাড়ি কোনও কিছুতেই তারা পিছিয়ে নেই। বাড়ির চিলে কোঠায় জমকালো কক্ষ থাকলেও সেখানে ওঠার জন্য প্রকাশ্য কোনও পথ নেই। কেন এই গোপন কক্ষ, কী হয় ওখানে। খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের প্রসাদে ছিল এমন গোপন কক্ষ। যা ছিল মাটির নিচে। আর এখানে সেই কক্ষ রাখা হয়েছে বাড়ির চিলে কোঠায়।

খুলনার মশিয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ও গুলিতে ৩ গ্রামবাসী ও গণপিটুনিতে হামলাকারী নিহতের পর আলোচিত ৩ ভাই এবং আশপাশের ১০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় থমথমে গ্রামের বাসিন্দারা এভাবেই বললেন।

আলোচনায় রয়েছে খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাসান আলী শেখের ৩ ছেলে শেখ জাকারিয়া হাসান, শেখ জাফরিন হাসান ও শেখ মিল্টন হাসান।

গ্রামবাসী জানান, হঠাৎ অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তিতে তারা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। সাধারণ গ্রামবাসী তাদের কাছে তুচ্ছ। এ কারণে তাদের আনুগত্যের বাইরে গেলেই নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও জাকারিয়া একজন সাধারণ গ্রামবাসীকে অবৈধভাবে গুলি দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এরপরই স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যার পরিণতিতে সংঘর্ষ ও নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। ঘাতকের বুলেট বিদ্ধ হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, জাকারিয়ারা তিন ভাই মূলতঃ খানজাহান আলী থানার ওসিকে ব্যবহার করে অত্যাহার-জুলুম চালাতো। বিপক্ষে গেলেই পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে হয়রানি করতো।

ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাফরিন ও জাকারিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। জাফরিন ও জাকারিয়া বাহিনীর ভয়ে অনেকেই এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া এর আগেও মশিয়ালী গ্রামের ফকিরপাড়ায় মিটুল নামে এক যুবকের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাফরিন ও তার ভাই জাকারিয়ার সংর্ঘষ হয়। তবে, জাকারিয়া শেখের সঙ্গে ওসির সখ্যতা থাকায় বিভিন্ন সময়ে অপরাধ করেও তারা পার পেয়ে গেছেন।

সূত্র জানায়, হামলায় অভিযুক্ত শেখ জাকারিয়া হাসান খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক। বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের খুলনা মহানগর শাখার দফতর সম্পাদক মুন্সি মাহবুবুল আলম সোহাগ। এছাড়া তার ভাই শেখ জাফরিন হাসান খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। কিন্তু সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় দল থেকে তাকেও বহিষ্কার করা হয়।

পুলিশ জানায়, জাফরিন ও জাকারিয়া স্থানীয় ডাক্তার বাড়ির মোমিন ড্রাইভারে ছেলে সাইফুল হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিরও মামলা রয়েছে। অপর ভাই মিল্টন অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জামিনে মুক্তি পায়।

মশিয়ালী গ্রাম ও আশেপাশে আটরা-গিলাতলা এলাকা জুড়ে থমথম পরিবেশ বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির জানিয়েছেন, হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত কোনও পুলিশ ব্যারাকে ফিরবেন না।

১৬ জুলাই রাতে গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগের পর ১৭ জুলাই এলাকা জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীকে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে দফায়-দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে কাউকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য হ্যান্ড মাইকে অনুরোধ করে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ জুলাইয়ে। মশিয়ালীতে ১৬ জুলাই রাতে বন্দুকের গুলিসহ মুজিবর শেখ (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশে ধরিয়ে দেন খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের নেতা জাকারিয়া ও তার ভাই খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের নেতা জাফরিন। মুজিবরকে গ্রেফতারের বিষয়ে এলাকাবাসী জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসা করতে গেলে তাদের বাড়ির সামনে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জাকারিয়া ও জাফরিনের লোকজন স্থানীয়দের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মশিয়ালী এলাকার মৃত বারিক শেখের ছেলে নজরুল ফকির ও ইউনুচ আলীর ছেলে গোলাম রসুল নিহত হন। এ সময় একই এলাকার সাইদুল শেখের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৭)-সহ ৭ জন গুলিবিদ্ধ হন।

তাদের রাতে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাইফুল মারা যান। অপরদিকে, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী গণপিটুনি দিয়ে জাকারিয়ার সহযোগী মোকসেদ আলীর ছেলে জিহাদ শেখকে (৩০) আটক করে হত্যা করে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ জনে।