কতজনকে খুন করেছেন ঠিক যেন মনে করতে পারছিলেন না ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক দেবেন্দ্র শর্মা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু খুনে অভিযুক্ত সেই দেবেন্দ্রকেই গতকাল বুধবার দিল্লির বাপরোলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের ধারণা, ১০০ জনের বেশি মানুষকে খুন করেছেন দেবেন্দ্র।
জয়পুরের সেন্ট্রাল জেলে ১৬ বছর কারাদণ্ডের পর এ বছরের জানুয়ারিতে ২০ দিনের জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়েছিলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের বাসিন্দা দেবেন্দ্র।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, প্যারোলের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেন্ট্রাল জেলে না ফিরে নিজেরই গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। গোপন সূত্রে পুলিশ দেবেন্দ্রর ঠিকানা পায়। গতকাল সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।
চিকিৎসক থেকে কীভাবে একজন পেশাদার খুনি হয়ে উঠলেন, দেবেন্দ্রর সেই কাহিনি তাবড় ক্রাইম থ্রিলারকেও হার মানাবে।
বিহারের সিওয়ান থেকে ডাক্তারি পাস করে সোজা রাজস্থানের জয়পুরে চলে যান দেবেন্দ্র। সালটা ১৯৮৪। সেখানে গিয়ে ক্লিনিক খোলেন তিনি। ১৯৯২ সালে গ্যাসের ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য ১১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সে ব্যবসায় চোট খান।
এরপরই চরম আর্থিক সংকট নেমে আসে তার জীবনে। পুলিশ সূত্রে খবর, টাকা উপার্জনের জন্য এরপরই অপরাধের রাস্তা বেছে নেন দেবেন্দ্র। ১৯৯৪ সালে আন্তঃরাজ্য কিডনি পাচারের কাজে নামেন। এই চক্রটি পরিচালনা হত মূলত জয়পুর, বল্লভগড় ও গুরুগ্রাম থেকে।
১৯৯৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ১২৫ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি অস্ত্রোপচার করে পাচার করেছেন। প্রতিটি কাজের জন্য পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা পেতেন দেবেন্দ্র। এই কাজের পাশাপাশি ১৯৯৫ সালে আলিগড়ের ছড়া গ্রামে ভুয়ো গ্যাস এজেন্সি খোলেন তিনি।
২০০১ সালে উত্তর প্রদেশেরই আমরোহাতে আরও একটি ভুয়া গ্যাস এজেন্সি খোলেন। সেই অভিযোগে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন দেবেন্দ্র। সেই এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের জয়পুরে গিয়ে ক্লিনিক শুরু করেন। সালটা ২০০৩।
পুলিশ জানিয়েছে, ক্লিনিক চালানোর পাশাপাশি কিডনি পাচারের কাজ করে বেশ আর্থিক দিক থেকে বেশ ফুলে-ফেঁপে উঠেছিলেন দেবেন্দ্র। এতেও ক্ষান্ত হননি। পরিকল্পিতভাবে অপহরণ এবং খুন করার কাজে নেমে পড়েন। ইতিমধ্যেই তাকে এ কাজে সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকজন সঙ্গী জুটিয়ে ফেলেছিলেন দেবেন্দ্র।