রাত বারোটা। অ্যালার্মের মৃদু শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল সানজিদার। নিঃশব্দে বিছানায় উঠে বসল সে। আস্তে করে বিছানা থেকে নামল। কোন শব্দ বা করে দরজার সামনে যেয়ে কান পাতল। কোন শব্দ নেই। বাসার সবাই ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু সানজিদার এখন ঘুমানোর সময় নেই। তার অনেক কাজ পড়ে আছে। ধীরে ধীরে জানালার পাশে যেয়ে দাড়াল। চারিপাশ নিশ্চুপ, কোথাও কোন শব্দ নেই। পৃথিবীটা তার আপন নিয়মে ঘুমিয়ে আছে। মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালো। আজ আকাশ জুড়ে শুধুই মেঘের রাজত্ব। চাঁদটাও যেন বড্ড অভিমানে মুখ লুকিয়েছে মেঘের আড়ালে। কেমন এক রহস্যময় আবহ চারিদিকে। কিছু একটা ঘটবে যেন তারই পূর্বাভাস দিচ্ছে।
জানালার কাছ থেকে ফিরে এলো সানজিদা। আলমারি খুলে ছোট এক ব্যাগ বের করল। তাতে নিজের জামা কাপড় ও প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র খুব দ্রুত গুছিয়ে নিল। নিজের মোবাইল ফোনে পুরোনো সিম চেঞ্জ করে নতুন একটা সিম লাগিয়ে নিল। বাইরে যেতে হবে তাই তৈরি হয়ে নিল সে।
ঘন ঘন সে জানালা দিয়ে পিছনের রাস্তায় উঁকি দিচ্ছে। তার ঘর থেকে পিছনের রাস্তাটা স্পষ্ট দেখা যায়। সেখানে একটি গাড়ি এসে থামার কথা। কিন্তু এখনো কোন গাড়ি আসেনি। ক্রমশই অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে সে। ফোন করতে যাবে এমন সময়ই পিছনের রাস্তাটায় আলো তিনবার জ্বলে-নিভে কিছু একটা সংকেত দেওয়ার চেষ্টা করছে। সানজিদা জানালার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখল কালো রঙের একটি গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। গাড়ির হেডলাইট জ্বলে নিভে আবারো সংকেত দিলো। সংকেত বুঝে নিয়ে খুব দ্রুত নিজের ডায়েরী থেকে একটি পাতা ছিঁড়ে একটা চিঠি লিখতে আরম্ভ করল।
চিঠি লিখা শেষ হয়ে গেলে পড়ার টেবিলে চিঠিটা চাপা দিয়ে মাত্র গোছানো ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নিঃশব্দে ঘর থেকে বের হয়ে আসল। বাড়তি নজর রাখল যাতে কোন শব্দ না হয়। খুব সাবধানে দরজা খুলে বাসা থেকে বেরিয়ে এসে আরো সাবধানে দরজা বন্ধ করল। সামান্য শব্দ হলেও তাতে বাড়ির কারো ঘুমের ব্যাঘাত হল না। কাকপক্ষীটিও টের পেল না কিছু।
কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সানজিদা? কেনই বা যাচ্ছে? এত রাতে কোথায় যাবে সে? বাসা থেকে বের হয়ে পিছনের রাস্তার দিকে দৌড় দিল। গাড়ির পিছনের দরজা আগেই খুলে রাখা ছিল। এমনটাই কথা ছিল। লাফ দিয়ে উঠে বসল গাড়িতে।
‘এত দেরী হলো যে?’ প্রশ্ন করল অমি। ‘কোনো সমস্যা হয়েছিল?’
‘না,’ জবাব দিল সানজিদা। ‘চল, এখানে থাকা মোটেই উচিৎ হবে না।’
‘গাড়ি ছাড়ুন।’ ড্রাইভারকে বলল সাদ। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আছে। কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিল তাদের বিশ্বস্ত ড্রাইভার।
পিছনের গলি পেরিয়ে বড় রাস্তা বরাবর ছুটে চলছে। নিশ্চিন্ত সিটের পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বুজল সানজিদা। একটা দুঃসাহসিক কাজ করে এসেছে। সে এখনো জানে না, সামনে আরো দুঃসাহসিক কাজ করা বাকি। এখানেই শেষ নয়।
পেপারস লাইফ/গল্প/সাকিব আহমেদ