ছুটির দিনে (পর্ব ২)


bdnews24 bangla newspaper, bangladesh news 24, bangla newspaper prothom alo, bd news live, indian bangla newspaper, bd news live today, bbc bangla news, bangla breaking news 24, prosenjit bangla movie, jeeter bangla movie, songsar bangla movie, bengali full movie, bengali movies 2019, messi vs ronaldo, lionel messi stats, messi goals, messi net worth, messi height


 (প্রথম পর্বের পর)

 

কয়েকদিন আগে

‘যাবি,’ আকস্মিক প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল অমি।

অমির বাড়ি। অমির বেডরুমে বসে আছে পাঁচ বন্ধু – সাদ, নিলয়, সানজিদা, রিফাত এবং অবশ্যই অমি। পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতকাল। ভার্সিটি এখন বন্ধ। সেমিস্টার ব্রেকের এবারের ছুটি দীর্ঘদিনের। ছুটির প্রথম দিনেই তাই সকাল সকাল অমির বাড়ি হাজির সবাই। এই দীর্ঘদিনের বিরতি নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে। এবার শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা।

এ সময় অমির বাড়িতে কেউ থাকে না। ছোটবেলাতেই ওর মা মারা গেছেন। বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে বাইরে থাকেন। দুই দিন হলো ইউরোপের কোন দেশে গেছে, অমি জানেও না। জানার প্রয়োজনও মনে করে না। আগে মাঝে মাঝে সাথে করে নিয়ে গেলেও অমি এখন আর যেতে চায় না। বিদেশ বিভুঁইয়ে ঘুরে ফিরে বেড়ানোর চেয়ে দেশে থাকাটাই শান্তির মনে হয়। ছোটবেলা থেকে এক গভর্নসের কাছে মানুষ সে। আমেনা খালা। অমির মা-বাবা বলতে গেলে ওই একজনই। যার কাছে মনের সব কথা শেয়ার করতে পারে, যার কোলে মাথা রেখে মায়ের সুবাস পেতে পারে। আমেনা খালারও কোনো সন্তান নেই। তাই মেয়ের মতো একজন পেয়ে নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করেছে।

‘আমার কোনো আপত্তি নেই,’ অমির প্রশ্নের জবাবে বলল নিলয়। রিফাত আর সানজিদা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। শুধু সাদ নীরব।

‘সাদ,’ বলল সানজিদা। ‘তুই কিছু বলছিস না যে?’

‘আমি কি বলব?’ জবাব দিল সাদ। ‘তোরা যে ডিসিশন নিবি, সেটাই হবে। আমার কোনো মত নেই এ ব্যাপারে।’

সাদ এমনই। তিন সেমিস্টার একসাথে পার করেছে তারা। সাদকে এভাবেই দেখছে। চুপচাপ, শান্তশিষ্ট। মাথার মধ্যে সারাক্ষণ কি যেন ঘুরতে থাকে। মাথার চুলগুলোও থাকে অগোছালো, কপাল পর্যন্ত নেমে আসে। কপালের নীচে দুটি চোখ, বুদ্ধির ঝিলিক দেয়। এই অগোছালো চুল কিছুটা গুছিয়ে এসেছে সানজিদা ও অমির কল্যাণে। তবে সাদের আনমনা ভাবটা দূর করতে পারেনি।

তাহলে তো হয়েই গেল?’ বলল অমিআমরা যাচ্ছি।

‘এবার কবে যাওয়া যায়,’ বলল রিফাত। ‘ঠিক করে ফেলতে হবে।’

‘হ্যা,’ সানজিদা বলল। ‘তবে সব চেয়ে কঠিন কাজটাই করা বাকি। বাসা থেকে পারমিশন ম্যানেজ করতে হবে।’

সানজিদার কাছে এই কাজটি সব থেকে বেশি কঠিন। বাসা থেকে অনেক স্বাধীনতা পেয়েছে সে। কিন্তু দূরে কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে প্রথম শব্দটি ‘না’। বন্ধুরাও জানে সেটা।

আজ ছুটির প্রথম দিনেই একসাথে মিলিত হয়েছে এই একটি ব্যাপারেই। ছুটিটা কিভাবে কাটাবে। অনেক ভেবে চিন্তে ঘুরতে যাওয়াই ঠিক হয়েছে। কিন্তু সেখানেও আরেক সমস্যা। কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় যাওয়া যায়! কিছুতেই কিছু ঠিক হচ্ছে না। অবশেষে লোভনীয় এক প্রস্তাব আসে অমির কাছ থেকে। ওদের গ্রামের বাড়িতে নিজেদের বিশাল এক বাংলো মতো বাড়ি আছে। কেয়ারটেকার দেখাশোনা করে। সেখানেই যাওয়া যেতে পারে।

তার এই প্রস্তাবে অমত করেনি কেউ। ঢাকাশহরের ব্যস্ততা আর কোলাহলে গ্রামের মিষ্টিমধুর পরিবেশে ছুটি কাটানো, মন্দ হয় না। আর যাই হোক, বিশুদ্ধ বাতাসে তো শ্বাস নেওয়া যাবে

অমি বলেছিল, ‘ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম। এখন আর যাওয়া হয় না। তবে চিন্তা করিস না। তোদের কোনো অসুবিধা হবে না।’

সুবিধা হোক আর না হোক, এই সুযোগ কোনোমতেই ছাড়া যায় না। তারা এক কথাতেই রাজি। তবে সমস্যা একটা আছে। সমস্যাটা সানজিদা। ও যেতে পারবে তো? ওর বাসায় অনুমতি দিবে তো?

‘আমি যদি যেতে না পারি, তোরাই ঘুরে আসিস।’ আক্ষেপ ঝরল সানজিদার কন্ঠে।

‘কি বলছিস তুই?’ বলল সাদ। ‘তুই যদি না যাস, আমরা কেউ যাবো না।’

হ্যা, সাদ ঠিকই বলেছে।একমত হলো রিফাত

আমরা গেলে একসাথেই যাবো।সাফ কথা জানিয়ে দিল অমি

কিন্তু কিভাবে? সানজিদার বাবা যদি রাজি না হয়? কিভাবে রাজি করানো যায়? সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিষয়টা। উপায় তো একটা বের করতে হবে। সানজিদাকে ছাড়া কোথাও যাওয়া হবে না।

আর কিছুক্ষণ একসাথে থেকে যে যার বাড়ির পথে রওনা দেয়। যাওয়ার আগে আমেনা খালার কাছ থেকে বিদায় নেয় সবাই। আবার আসতে বলে দেয় খালা। কোনো সংকোচ যেন না করে। তাদের এমন অত্যাচার মুখ বুজে এই একজনই সহ্য করে। তাই অমির মা-তুল্য আমেনা খালা তাদের খুব প্রিয় হয়ে গেছে। আর অমির বাড়ি যেন তাদেরই বাড়ি। যেহেতু বাসায় কেউ থাকে না, তারা এখানেই ঘাঁটি গেড়ে বসে। আড্ডা দেওয়ার জন্য এর থেকে ভালো জায়গা আর হয় না। তাদের অহরহ আসা যাওয়ায় বিন্দুমাত্র বিরক্তবোধ করে না খালা। বরং মুখরোচক সুস্বাদু খাবার রান্না করে পরিবেশন করে। অমির বাসায় বেশি বেশি আসার এই আরেকটা কারন। আমেনা খালার সুস্বাদু হাতের রান্না! লোভ তো আর ছাড়া যায় না।

 

গভীর রাত। মৃদু এক শব্দে ঘুম ভেঙে গেল সাদের। বালিশের পাশে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠেছে রাতের নীরবতা ভেঙে। হাতে নিয়ে দেখল স্ক্রিনে সানজিদার নাম। মোবাইলের ঘড়ির সময় জানান দিচ্ছে এখন সময় রাত দুইটা বেজে পনেরো।

এত রাতে সানজিদা? কোনো সমস্যা হলো না তো?  দ্রুত ফোন রিসিভ করল সাদ। বলল, ‘হ্যালো?’

ও প্রান্ত থেকে কোনো শব্দ নেই। কেমন যেন ফোঁপানোর মত আওয়াজ হচ্ছে। সানজিদা কাঁদছে? কিন্তু কেন?

‘সানজিদা?’ আবার বলল সাদ। ‘কি হয়েছে?’

আর থাকতে পারল না সানজিদা। হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।

‘সানজিদা, কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?’ অস্থির হয়ে বলল সাদ।

‘আমার ভাগ্যটা খুব খারাপ, জানিস।’ কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল সানজিদা।

‘কি হয়েছে বলবি তো?’ ‘তোদের সাথে বোধহয় আমার যাওয়া হবে না।’ চুপ হয়ে গেল সাদ। বুঝতে পারছে সানজিদার মন খারাপের কারণ।

আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, ‘আঙ্কেল কিছু বলেছে?’ সানজিদা চুপ। ওর ফোঁপানোর শব্দ কানে আসছে।

‘কি বলেছে আঙ্কেল?’ আবার জিজ্ঞেস করল সাদ।

‘যেতে দিবে না।’

‘আর?’

‘বলেছে, আমি যা ইচ্ছা তাই করি। কখনো বাঁধা দেয় না। কিন্তু দূরে কোথায় যেতে দিবে না। যে ব্যাপারে যেন আর কোনো কথা না বলি।’ আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সানজিদা। চুপ করে আছে সাদ। কি জবাব দিবে? ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। একটু পর থেমে আবার সানজিদা বলল, ‘আমি তো যেতে পারছি না। তোরাই ঘুরে যায়। তোদের যাওয়া হলে আমারও যাওয়া হবে। মনে করিস আমি আছি তোদের সাথে।’

দীপ্তির এ কথায় কতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে, বুঝতে পারছে সাদ। ‘দেখ সানজিদা,’ বলল সাদ। ‘তোকে সকালেও বলেছি, আবারও বলছি। তোকে ছাড়া আমরাও কোথাও যাচ্ছি না। যদি যেতে হয় একসাথেই যাবো। আর না হলে কেউ যাবে না।’

‘বুঝতে চেষ্টা কর। আমার জন্য কেন তোরা তোদের আনন্দ মাটি করবি?’

‘আমরা পাঁচজন সবসময় একসাথে ছিলাম, এখনো আছি আর ভবিষ্যতেও থাকব। তোকে ছাড়া আমরা কি করে যাই? এতটাও স্বার্থপর আমরা নই।’

‘আমি কি তাই বললাম? আমি চাই না আমার জন্য তোদের এই ছুটিটা নষ্ট হোক।’

‘আচ্ছা, আমরা যদি আঙ্কেলকে বলি?’

‘লাভ হবে না। আমি তো আব্বুকে চিনি। আব্বু মানবে না।’

‘কিছু তো একটা উপায় বের করতে হবে।’

‘এখানে কোনো উপায় নেই। আচ্ছা, তুই ঘুমা। রাতে তোর ঘুম নষ্ট করলাম। আমি রাখছি।’ বলেই ফোনের লাইন কেটে দিল সানজিদা। সাদকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিল না।

এখন কি করা যায়? বাকিদের ফোন দিয়ে জানাবে? না থাক, এখন তিনটে বাজে। সবাই বোধহয় ঘুমাচ্ছে। পরে ভাবলো, রিফাতকে ফোন দেওয়া যেতে পারে। ও তো দেরিতে ঘুমায়, হয়ত এখনো জেগে আছে। ফোনের কল লিস্ট থেকে রিফাতের নাম খুঁজে বের করে ফোন করল। সঙ্গে সঙ্গেই রিসিভ হলো।

ও প্রান্ত থেকে রিফাতের কন্ঠ, ‘হ্যালো!’

‘ঘুমিয়ে পড়েছিলি?’ জিজ্ঞেস করল সাদ।

‘না,’ বলল রিফাত ‘এই অনলাইনে চ্যাট করছিলাম। কিন্তু তুই এত রাতে?

‘একটা সমস্যা হয়েছে।’

‘সমস্যা! কি?’

‘সানজিদা ফোন করেছিল একটু আগে।’

‘এত রাতে? কি বলল?’

‘আঙ্কেল ওকে যেতে দিবে না। এই জন্য ওর মন খুব খারাপ। ফোন দিয়ে কাঁদছিল।’

‘কি বলছিস? এখন উপায়?’

‘জানিনা। আমি ওকে জানিয়ে দিয়েছি, ও না গেলে আমরাও যাবো না। আর আমরা গেলে ওই-ও যাবে।’

‘সেটা না হয় হলো। কিন্তু কিভাবে ওকে নিয়ে যাবি? কিছু ভাবছিস?’ ‘মাথায় কিছু আসছে না রে।’ ‘বাকিদের বলেছিস? আমি ফোন দিব ঐশী আর নিলয় কে?’

‘এত রাতে দরকার নেই। ওরা ঘুমাচ্ছে হয়ত। সকালে জানাস। কাল দেখা করাটা জরুরী। সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিবো কি করা যায়।’

‘ঠিক আছে।’ বলল রিফাত। ‘এখন তাহলে ঘুমিয়ে পড়। সকালে দেখা হবে।’

‘হুম, গুড নাইট।’

‘গুড নাইট।’ ফোন কেটে দিল রিফাত।

সাদও ফোন রেখে দিল বালিশের পাশে। শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি করা যায়। উপরে সিলিং ফ্যানটা জোরে ঘুরছে। বিরাম নেই। কিন্তু মানুষের তো বিরাম আছে। সমস্যাটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল তার হিসেব নেই।

 

চলবে…

পেপারস লাইফ/গল্প/সাকিব আহমেদ 

 

পড়ুন: ছুটির দিনে (পর্ব ১)