বই : জলকুঠুরি
লেখক : মুশফিক উস সালেহীন
রিভিউ লেখক : সাকিব আহমেদ
প্রকাশনী : চিরকুট প্রকাশনী
প্রচ্ছদ : জাওয়াদ উল আলম
পৃষ্ঠা : ১৬০
মুদ্রিত মূল্য : ৩০০৳
ব্যক্তিগত রেটিং : ৪/৫
অতীত পিছু ডাকে। এই পিছু ডাক অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। তবুও কখনো অগ্রাহ্য করা বোধহয় বুদ্ধিমানের কাজ। অতীতে অনেক ভালো স্মৃতি থাকতে পারে। জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর কথা বলে দিতে পারে। আবার কিছু সময় সেখানে জন্ম নেয় বিষাদের ছায়া। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে বিষাদটুকু ছড়িয়ে যায় অলিন্দ থেকে নিলয়ে। যেখানে কিছু অজানা গল্প অজানা থাকাই ভালো। জানা হয়ে গেলে সব শেষ হয়ে যায়। অতীতের যে গর্ত বুজে যায়, সেই গর্ত নতুন করে খোঁড়া উচিত না। তাতে নিজেরই পতিত হওয়ার শঙ্কা থাকে। সেকারণেই হয়ত মাঝে মাঝে পুরনোকে ভুলে নতুনকে আকড়ে ধরে বাঁচতে হয়। ভুলে যেতে হয় পেছনে ফেলে আসা কিছু সময়কে। যে সময় হয়তো কখনোই নিজের ছিল না!
কাহিনি সংক্ষেপ :
আরিফুর রহমান দেশে ফিরেছেন চল্লিশ বছর পর। চল্লিশ বছর অনেকখানি সময়। স্মৃতিতে এই তো সেদিন! এই দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে কাটিয়ে আসা আরিফ সাহেব নিজের শৈশবের গ্রামে পরিবারের অবশিষ্টাংশে ফিরেছেন। নিজের যতটুকু জমিজমা আছে তা অন্যদের দান করে আবার ফিরে যাবেন। হয়তো শেষবারের মতো। এই দেশের আলো বাতাসে আবার কি ফেরা হবে?
রিতা মেয়েটার লড়াইটা একার। যেখানে কেউ পাশে থাকে না। স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছে বহুদিন হলো। সন্তান রাতুলকে নিয়ে অভাবের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলেছে। এই অভাবে অনেকেই সাহায্য করতে চায়। কার চাওয়া পবিত্র, কেই বা সুযোগের অপেক্ষায় আছে; বুঝতে অসুবিধা হয় না রিতার। নিজের সম্ভ্রম, আত্মমর্যাদার সাথে নিজেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা যতটা হোক; গ্রাম্য পরিবেশে একা একটা মেয়ের পক্ষে কতটা সম্ভব? তবুও চেষ্টা চলে। যার মা বিরঙ্গনা, যুদ্ধে বর্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন; তার মেয়ে হয়ে যে ভেঙে পড়া চলে না। সন্তানকে নিয়ে এ লড়াই জিততেই হবে। যে করেই হোক।
আরিফ সাহেব তার অতীতের খোঁজে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চল্লিশ বছর আগের পুরনো দিনের খোঁজ পাওয়া এত সহজ নয়। আরিফ সাহেব হাল ছাড়ার পাত্র নন। নিজের চেষ্টায় খুঁজেও পেয়েছেন অতীতে ফেলে আসা বন্ধুমহলের পরিচিত কিছু মুখকে। সেখান থেকে জানতে পেরেছেন চল্লিশ বছর আগের সেই ইতিহাস। যা জানা না গেলেই হয়তো ভালো হতো! কিছু গোপন জিনিস থাকে, যা জানতে গেলেই সব এলোমেলো হয়ে যায়।
সেই এলোমেলো হয়ে যাওয়া পথেই আবার হারিয়ে যেতে হয়। পিছুটানে আর ফেরা হয় না।
আরও পড়ুন : ক্রিকেটের আলোর পেছনে আছে অন্ধকার | বইয়ের রিভিউ
বই পর্যালোচনা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া :
“জলকুঠুরি” উপন্যাসটা কি মুক্তিযুদ্ধের? নাহ! উপন্যাসের উপজীব্য বিষয় এর চল্লিশ বছর পর। চল্লিশ বছর পরের গল্প হলেও এর সাথে ফিরে ফিরে এসেছে পুরনো দিনের কথা। সেই সময়কার কথা। যেই সময়ে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল একাধিক জীবন। এক ভয়াল যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছিল অনেক মানুষের দু’চোখে থাকা উদ্যম-উত্তেজনা।
মুশফিক উস সালেহীনের “জলকুঠুরি” উপন্যাস স্মৃতির পাতা হাতড়ে বেড়ানো এক মানুষের গল্প। যেই মানুষটা চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেলে আসা দিনগুলোকে ভুলে থাকতে পারে না। এই উপন্যাসে আছে ভালো থাকা, খারাপ থাকা। আছে গ্রাম্য জীবনের এক সহজ সরল জীবনযাত্রা। যে জীবনযাত্রা স্রোতের টানে ভেসে যায়। এই ভালো তো এই খারাপ। উপন্যাসে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল জীবনের চিত্র ভেসে উঠেছে। কঠিন পরিস্থিতিতে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবার কীভাবে জীবনযাপন করে। আবার একবেলা ভালো মতো বেঁচে থাকার চেষ্টা করা কারো কষ্টের সময় খুন সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
“জলকুঠুরি” উপন্যাসের একটি বড়ো অংশজুড়ে আছে বৃষ্টি। গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে বৃষ্টি আনন্দদায়ক। এই শোভা যে অবলোকন করেছে, তার জীবন অনেকটাই সার্থক। এই আনন্দঘন মুহূর্তের অপর পিঠে আছে বিষণ্ণতা। বৃষ্টির দিনের কাদামাটি, নদীর উপচে পড়া বানের জ্বলে ভেসে যাওয়া কেবল বিড়ম্বনা-ই বাড়ায়। শহুরে জীবনে বৃষ্টির ঝাপটা রোমান্টিসিজম নিয়ে এলেও গ্রামে তার উল্টো চিত্রও দেখা যায়।
“জলকুঠুরি” উপন্যাসে লেখক গ্রাম বাংলার প্রকৃতি খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই প্রকৃতির প্রেমে পড়া যায়, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায়। বর্তমান সময়ে গ্রামীণ জনপদেও শহুরে ছাপ দেখা যায় সেটাও লেখক স্পষ্ট করেছেন। তবে লেখক চাইলেই চল্লিশ বছর আগের গ্রাম বাংলার সাথে বর্তমান সময়ের পার্থক্য মোটাদাগে দেখাতে পারতেন। অবশ্য তা লেখকের স্বাধীনতা।
“জলকুঠুরি” উপন্যাসে লেখক এমন কিছু মানুষকে চিত্রিত করেছেন, যারা ঠিক মানুষ না অমানুষ বোঝা কঠিন। গ্রাম্য রাজনীতি বলে একটি কথা প্রচলিত আছে, যা শহরের চার দেয়ালে জন্মে ওঠা রাজনীতিকেও হার মানায়। এই রাজনীতির মোকাবেলা করার সাধ্য সাধারণ মানুষের নেই। উপন্যাসে এমন কিছু মানুষ এসেছে, মুখোশের আড়ালে যাদের বর্বরতা ঢাকা পড়ে। আবার এমন কিছু মানুষ আছে, বাইরের কঠোর আবরণের ভিতরে কোমল হৃদয় মানুষকে স্পর্শ করে।
“জলকুঠুরি” উপন্যাস স্মৃতি রোমন্থনের উপন্যাস। কখনো গল্পের ছলে, আবার ভাবনায় হারিয়ে অতীত খুঁজে বেড়ানো বেশ লেগেছে। এতে কিছু ব্যাকস্টোরি এসেছে যা গল্পের প্রয়োজনে জরুরি ছিল। আমার মনের মধ্যে কিছু জানতে চাওয়ার বাসনা ছিল, যা জানা যায়নি। হয়ত লেখক জানতে দিতে চাননি। সবকিছু জানতে হয় না। কিছু কথা গোপন-ই ভালো।
এই গল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয় ছিল সংলাপের ভাষা। লেখক যে এ বিষয় গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন তা স্পষ্ট। গ্রামীণ ভাষার সাথে শুদ্ধ ভাষার মিলবন্ধন ভালো ছিল। যেমন, রিতার তার ছেলের শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার জন্য শাসন ভালো লেগেছে।
“জলকুঠুরি” উপন্যাসটা গ্রাম বাংলার গল্প, জলের গল্প, স্মৃতি খুঁজে ফেরা এক মানুষের গল্প, এবং সব শেষে এক সর্বনাশা যুদ্ধের গল্প। যেখানে কিছু মানুষ হারিয়েছে নিজের সম্বল আর ভালোবাসাকে।
চরিত্রায়ন :
“জলকুঠুরি” উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ চরিত্র। চরিত্রগুলোর উপর ভর করেই গল্প এগিয়েছে। এর প্রধান আকর্ষণ আরিফ সাহেব। তার সাথে উঠে এসেছে রানু খালা, করিম মজুমদার, হারুন, জহির রহমান, খতিব সাহেব, রিতা, রাতুল ছাড়াও আরও অনেক। প্রত্যেকেই ভিন্ন মানুষ। প্রত্যেকের গল্প আলাদা। উপন্যাসে নিজেদের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেছিলেন নিজ নিজ গুণে।
বর্তমান সময়ে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু চরিত্র ফিরে গিয়েছিল পুরনো সে দিনেও। ফিরে এসেছিল চল্লিশ বছর আগের গল্প। তারপরও কিছু কথা থাকে। “জলকুঠুরি” উপন্যাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে আছেন আরিফ সাহেবের বাবা। তার পেছনের গল্প উপন্যাসে বলা হয়নি। আরিফ সাহেবের বাবার কথা অল্পস্বল্প বলা হলেও একটিবারের জন্যও তার মায়ের প্রসঙ্গ আসেনি। এছাড়াও রানু খালার যে ইতিহাস বলা হয়েছে, তারও ব্যাকস্টোরি তুলে ধরেননি লেখক। ব্যাপারটা কি ইচ্ছাকৃত? একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে জানার আগ্রহ জাগতেই পারে। আরিফ সাহেবের আমেরিকা যাওয়া, ঐখানেই থেকে যাওয়া, কারো সাথে যোগাযোগ না করা, আবার চল্লিশ বছর পরই কেন ফিরে এলেন; জানার ইচ্ছে ছিল। লেখক চাইলেই বিস্তৃতি করতেই পারতেন।
রিতা চরিত্রকে খুব গুরুত্বের সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। এমন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারীর গল্প তো সচরাচর দেখা যায় না। রিতার স্বামীর ইতিহাস জানার ইচ্ছে ছিল। রিতার এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তার সরকারি চাকুরে বাবা কেন খোঁজখবর রাখছেন না, বোধগম্য হয়নি। বিয়ে দিলেই কি নাড়ির টানে ভাটা পড়ে? যেখানে স্বামী হারিয়ে দিশেহারা অবস্থায় দিন কাটছে মেয়েটার।
আমার ছুটি চরিত্রটিকে মনে ধরেছে। ফোকলা দাঁতে সারা বাড়ি ছুটে বেড়ানো চঞ্চল বাচ্চা মেয়েটিকে ভালো না লেগে উপায় নেই আসলে। ছুটির মাকে পুরো বইয়ে হানিফের বউ বলা হলেও, হানিফ কে? তা বুঝতে পারিনি।
জলকুঠুরির জীবন :
রসিক নাগর জল কাটিয়া, নাও বাহিয়া,
অচীন দেশে যায় চলিয়া.…..
ফেরে না…
কূলকিনারা সবই জলে, ঘাটের পরে
ঘাট ছাড়ে যায়, নাওর নেশা…
ছাড়ে না…
জলকুঠুরি আসলে কী? পানির উপর ভেসে থাকা কিছু কুটির বা কুড়েঘর; যেখানে গল্পের আসর জমে। স্মৃতির পাতা খুলে লেখা হয় দুঃখ-কষ্ট, হাসি-আনন্দের গল্প।
“জলকুঠুরি” উপন্যাস পুরোটা জুড়েই ছিল বৃষ্টি ও পানির উপর বসবাস। এই পানিতে ঘুরেই গল্প এগিয়েছে। স্মৃতিতে স্মৃতিতে ছেয়ে গেছে সময়। পানির উপরের জীবনকে লেখক যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সে হিসেবে গল্পের নামকরণ সার্থক বলা-ই যায়!
আমাদের জীবনটাও তো জলের মতো ভাসমান। এ-কুল ও-কুল ভেসে কোন কুলে যেয়ে ঠাঁই মিলবে তার ঠিক নেই
লেখক সম্পর্কে :
লেখক সম্পর্কে ঠিক কি বলা যায়? যা জানার তা তো ফ্ল্যাপের পেছনের পাতাতেই আছে। তবুও কিছু বলা যায়। লেখকের একটি মাত্র বই পড়েছিলাম এর আগে। “ঋ” বইটিকে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বলা হলেও, আমার কাছে সামাজিক উপন্যাসই মনে হয়েছিল। যার মাঝে মাঝে থ্রিল ছিল কেবল। লেখকের পড়া দ্বিতীয় বই হিসেবে “জলকুঠুরি” আরও বেশি পরিণত মনে হয়েছে। অনেকদিন মনে রাখার মতো বই।
লেখকের উৎসর্গপত্র মন কেড়েছে। আমাদের জীবনে বিশেষ মানুষের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও কিছু বিষয় থাকে, যা আমরা গুরুত্ব দিই। ফেসবুকের একটা পেইজ, যা কোনো এক একাকীত্বের সময়ে ভালো থাকার মাধ্যম ছিল; এমন পেইজকে উৎসর্গ করার ব্যতিক্রমী ভাবনা ভালো লেগেছে।
ভূমিকাতে লেখা লেখকের কথাও মনে রাখার মতো। কখনো কখনো এভাবে নিজের সাথে গল্প করতে হয়। এভাবে গল্প করাতেই পাঠকের সাথে তৈরি হয় লেখকের বন্ধন।
বানান ও সম্পাদনা :
বইয়ের বানানের দুয়েক জায়গায় মুদ্রণ প্রমাদ ও প্রচলিত কিছু বানান ভুল লক্ষ্য করেছেন। যদিও তা ছিল সহনীয় মাত্রায়। দুয়েক জায়গায় সম্পাদনার অভাব অনুভব করেছি। কিছু ক্ষেত্রে ভুল উপমার উপস্থিতি ছিল। তার সংখ্যাও অনেক কম। বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই যে সেরা প্রোডাকশন যে হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রচ্ছদ ও বাঁধাই :
চিরকুট প্রকাশনীর বাঁধাই নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। সবসময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টাই তারা করে।
এই বইয়ের প্রচ্ছদটা নজরকাড়া। বইয়ের প্রচ্ছদে ভেসে থাকা ফুলটি যেন আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। নামলিপিও অসম্ভব সুন্দরভাবে গল্পের সাথে মানিয়ে গিয়েছে।
প্রিয় কিছু উক্তি :
- যে অতীত অচেনা হয়ে যায়, তাকে পুনরায় ধরার প্রচেষ্টা কেবল বিড়ম্বনাই সৃষ্টি করে।
- মেয়ে মানুষের হিংসে বড়ো ভয়ংকর জিনিস! চারপাশ ছাই করে দেয়।
- চল্লিশ বছর কেটে গেছে। সংখ্যায় যত বিশাল মনে হয় সময়টাকে, স্মৃতিতে ততটা বিশাল নয় মোটেও। চল্লিশ বছর ভবিষ্যৎ, অনেক সময়। কিন্তু চল্লিশ বছর অতীত, নিমেষমাত্র! পাড়ি দেওয়া শেষ হয়ে গেলে, পথের দূরত্ব কমে যায়।
- একবার যে-মানুষ মানুষ ছাড়তে শিখে যায়, সে আর কখনোই কাউকে ধরে রাখতে চায় না। এক সুর কেটে গেলে সে অন্য গান ধরে।
- মানুষ কখনোই মানুষকে চিনতে পারে না। কারণ তারা চিনতে চায় না। তারা নিজের মতো করে একটা গঠন তৈরি করে। কিছুটা সত্যও থাকে তাতে, তবে বেশিরভাগই থাকে কল্পনা। এবং মানুষ কল্পনায় বিশ্বাস করতেই ভালোবাসে।
- যে একবার সম্পর্ক ভাঙতে শেখে, সে আর কখনও গড়তে পারে না। সব সম্পর্কেই সে ভাঙন দেখে। ভবিষ্যতে একাকিত্ব দেখে। সম্পর্ক গড়া এবং ধরে রাখার চেষ্টায় অপ্রয়োজনীয়তা দেখে।
- মায়েদের কান্নার স্বরটা অন্যরকম হয়। একজন মেয়ে তার জীবনে নানান স্বরে কাঁদে- কখনও বুঝহীন বালিকার আবদারের কান্না; কখনও কিশোরীর অস্তিত্বসংকটের কান্না; কখনও তরুণীর অব্যক্ত প্রেমের অভিমান; কখনও মায়ের পৃথিবী উজাড় মমতার কান্না। সব কান্নার স্বর আলাদা। কিন্তু পুরুষের সব কান্না একরকম- প্রথমে সশব্দে, তারপর শব্দহীন, তারপর অশ্রুহীন।
- যে আঘাত একবার এসে যায়, তা সেরেও যায়। কিন্তু যে আঘাত সম্ভাব্য, তা প্রতিদিনই অল্প অল্প করে ক্ষত বৃদ্ধি করে এবং মাঝে মাঝে সেই আশঙ্কা বরং মূল আঘাতকেও ছাপিয়ে যায়।
পরিশেষে, ১৬০ পৃষ্ঠার “জলকুঠুরি” উপন্যাসের আগাগোড়া পুরোটাই মনে রাখার মতো। ছোট্ট এ বইটির সাথে সময় ভালো কেটেছে। এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র যেন আমাদের চারপাশ থেকেই নেওয়া। যেখানে ভালোবাসা, হিংসা, বিষাদ, আনন্দ সব মিলেমিশে থাকে। তারপরও কখন কোনটা কাকে ছুঁয়ে যায়, কেউ জানে না।