দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না বানভাসিদের


bdnews24 bangla newspaper, bangladesh news 24, bangla newspaper prothom alo, bd news live, indian bangla newspaper, bd news live today, bbc bangla news, bangla breaking news 24


স্বল্প বিরতি দিয়ে দুই দফা বন্যায় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি জীবন নিয়ে নাকাল কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকার অর্ধশতাধিক ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ। জল-কাদা আর ভাঙনের সাথে নিত্য বসবাসকারী এসব মানুষের জন্য সহসা কোনও সুখবর নেই।

জেলার নদ-নদী গুলোতে পানি বিপদসীমার মধ্যে থেকে দুই তিনদিন কিছুটা কমার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বর্ষণ আর উজানের ঢলে আগামী কয়েকদিন আবারও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে বানভাসিদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

ঈদুল আজহার আগে পানিবন্দি দশা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলার সম্ভাবনা নেই।

দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না বানভাসিদের

চলমান বন্যায় জেলার চার শতাধিক চরসহ নদ-নদী অববাহিকার এলাকাগুলো যেন অখন্ড জলরাশিতে রূপ নিয়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধ, উঁচু সড়ক কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। কেউবা ভাঙনে বসত ভিটা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দিশাহারা। এর মধ্যে খাদ্য সংকটে যোগ হয়েছে ক্ষুধার জ্বালা।

সব মিলিয়ে এক দুর্বিষহ ও মানবেতর পরিস্থিতি বানভাসিদের। নদ-নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে এখন শুধুই নীরব আহাজারি। বিগত কয়েক বছরে এতটা দীর্ঘায়িত বন্যার কবলে পড়েনি অববাহিকার বাসিন্দারা। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী এ বন্যার ধকল সামলে ওঠা নিয়ে সংশয় আর অনিশ্চয়তা বানভাসিদের চোখে মুখে।

পাউবো’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বুধবার (২২ জুলাই) সকাল ৬ টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পারি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ২৪ ঘন্টায় নুনখাওয়া পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না বানভাসিদের

পাউবো সূত্র জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীগুলোর সবক’টি পয়েন্টে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ এবং ধরলা ও তিস্তার উজানে সাবহিমালয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল ও সিকিম অংশে প্রচুর ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজানের বৃষ্টিস্রোতের পানি আগামী কয়েকদিন জেলার নদ-নদী দিয়ে ভাটির দিকে পতিত হবে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বুধবার (২২ জুলাই) সকালে পাওয়া খবর অনুযায়ী জেলার তিস্তা অববাহিকার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলা এবং ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যা বেশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলার নদ-নদীর সবক’টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার এক মিটার উচ্চতা অতিক্রম করতে পারে। ফলে বানভাসিরা সহসাই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় আসন্ন কোরবানি ঈদের পরেও বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না বানভাসিদের

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১৯০ মেট্রিকটন চাল, ৯ লাখ জিআর ক্যাশ এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বিতরণ চলমান রয়েছে। এছাড়াও শিশু ও গো খাদ্য বাবদ আরও দুই লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঈদ সামনে রেখে ভিজিএফ বাবদ ৪ হাজার ২৮৫ মেট্রিকটন চাল উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা ঈদের আগেই চার লক্ষাধিক পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হবে।

পেপার’স লাইফ/কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি/চন্দন কুমার সরকার