বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েকদিনের অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের আবাদি জমি সহ দ্বীপচরগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
পাশাপাশি ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় লোকজন বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে মধ্য জুনে বন্যার আশঙ্কা নাকচ করলেও জুনের শেষে একটি স্বল্প কিংবা মাঝারি আকারের বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলার অভ্যন্তরে সহ ভারতের বেশ কিছু এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলার নদ-নদীর সবকটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকাল ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সেতু পয়েন্টে বিপদ সীমার ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে আরও তিন চারদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও মধ্য জুনে বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে জুনের শেষ সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি স্বল্প কিংবা মধ্য মেয়াদী বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, একদিন পূর্বে গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৩৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও তিন থেকে চারদিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।
এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলার ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশের পাশাপাশি ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত জগমনেরচর নামক গ্রামে ধরলার ভাঙন শুরু হয়েছে। সেখানে একটি বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনে বিলীন হওয়া থেকে বাঁচতে অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, উজানের ঢলে জেলার তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও আপাতত এই দুই নদী অববাহিকায় বন্যার কোনও আশঙ্কা নেই। তবে ভারতের আসাম ও মোঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় উজানের ঢলে জুনের শেষ সপ্তাহে কিংবা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় স্বল্প কিংবা মধ্য মেয়াদী বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে।
চলমান নদী ভাঙনে চরাঞ্চলের ভাঙন মোকাবিলায় আপাতত কোনও উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,‘ মূলত নদীর তীরবর্তী এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলছে। অন্যান্য এলাকার ভাঙনের বিষয় অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পেপার’স লাইফ/কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি