বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময়ে ডবলমুরিং থানার বাদামতলী বড় মসজিদ গলিতে চলে সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান। এ অভিযানে এক পুলিশ সদস্য ও তিন সোর্সের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে স্কুলছাত্রের মা ও বোন আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর এক স্কুল ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশের ধারণা, মা ও বোনকে পুলিশ বাসা থেকে থানায় নিয়ে গেছে—এমন তথ্য জানার পর বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ‘আত্মহত্যা’ করে স্কুলছাত্র সালমান ইসলাম মারুফ। আর পরিবার বলছে, বাসায় সালমানের মা-বোন পুলিশ সদস্য ও সোর্সদের হাতে লাঞ্ছিত না হলে এমন ঘটনা ঘটত না।
মৃত সালমান ইসলাম মারুফের বাবার নাম দিদারুল আলম। চার ভাই-বোনের মধ্যে সালমান দ্বিতীয়। সে চাচার দোকানে চাকরির পাশাপাশি টিঅ্যান্ডটি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। ওই গলিতেই তাদের বাসা।
এদিকে ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তদন্ত প্রতিবেদন (রিপোর্ট) দেওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তা জমা দেয়নি কমিটি।
জানা যায়, কিছুদিন আগে সালমানের বাইসাইকেল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিল। এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি তাদের বাসায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন। এ সময় সালমান ‘চোর চোর’ চিত্কার দিয়ে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে এবং আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাঁকে (ব্যক্তি) মারধর করে। তখন সেখানে সাদা পোশাকে উপস্থিত হন ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক হেলাল উদ্দিন।
তিনি নিজেকে পুলিশ সদস্য এবং উকিঝুঁকি দেওয়া ব্যক্তিকে সোর্স দাবি করেন। এ সময় সালমানের মা, বোনসহ স্বজনদের সঙ্গে এসআই হেলালের বিতণ্ডা শুরু হয়। হেলাল ও সোর্সদের সঙ্গে মা ও দুই বোনের ধস্তাধস্তি হয়। এই ফাঁকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় সালমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুরুতে সালমানের সঙ্গে বিতণ্ডার সময় যখন তাঁরা নিজদের পুলিশের সদস্য ও সোর্স পরিচয় দেন, তখনই সালমানের মা রুবিনা, বোন নেহাসহ অন্যরা হেলালের কাছে ক্ষমা চান। মা দাবি করেন, দুই দিন আগে ছেলের মোবাইল ফোন ও সাইকেল চুরি হওয়ায় সে সন্দেহ করেছিল আবার (বাসায় উঁকি দেওয়া ব্যক্তি) চোর এসেছে। সে কারণে সালমান এমন আচরণ করেছে। আসলে সালমান ভালো ছেলে। কিন্তু এসআই হেলাল ও সোর্সরা এতে খুশি হতে পারেননি। পরে তাঁরা এক লাখ টাকা দাবি করেন। তখন সালমানের মা ও বোন
অনুনয়-বিনয় করে এত টাকা দিতে পারবেন না বলে জানান। এতে হেলাল ও তাঁর সঙ্গের তিন সোর্স আরো উত্তোজিত হয়ে সালমানকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন।
তখনই পুলিশ সদস্য ও সোর্সের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে; সালমানের মা ও বোনের শরীরে সোর্সরা ‘হাত’ দিয়েছেন, নেহার ‘গলা টিপে’ ধরেছেন—এমন অভিযোগ করা হয়েছে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে।
ঘটনাপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হওয়ার একপর্যায়ে এসআই হেলাল থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে ডবলমুরিং থানার মোবাইল ডিউটিতে থাকা পুলিশদল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তারা সালমানের বোন নেহাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। তাই পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নেওয়ার সময় মাকেও ডেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নেয় পুলিশ। এদিকে পুলিশের সঙ্গে বিতণ্ডার জের ধরে বোন নেহার (২১) অজ্ঞান হওয়া এবং মা রুবিনা আক্তারকে পুলিশ বাসা থেকে থানায় নিয়ে গেছে—রাতে বাসায় ফিরে এমন তথ্য জানার পর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সালমান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিনকে ঘটনার রাতেই প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।