বান, বৃষ্টি আর ভাঙনে দুর্ভোগে কুড়িগ্রামের মানুষ


bdnews24 bangla newspaper, bangladesh news 24, bangla newspaper prothom alo, bd news live, indian bangla newspaper, bd news live today, bbc bangla news, bangla breaking news 24


ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে অবস্থিত চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর গোলজার হোসেন। প্রথম দফা বন্যায় গৃহহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন থানাহাট ইউনিয়নের মাটিকাটা মোড়-রমনাঘাট সড়কে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সেখানেই তাদের অস্থায়ী বসবাস। কিন্তু সেই সড়কের ওপরও পানি।

এর মধ্যে রবিবার (১৯ জুলাই) ভোররাত থেকে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে সড়কে পলিথিন আর কাপড় ঘেরা তাবুর ভেতরে আশ্রয় নেওয়া দিনমজুর গোলজার হোসেনের মতো পরিবারগুলো শিশু সন্তানসহ ভিজে তাদের দারিদ্রতা নামের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন যেন।

গোলজার হোসেনের স্ত্রী জানান, তিন বেলা ঠিকমতো খাবার পাচ্ছেন না। যা জুটছে অন্যের কাছ থেকে চুলা ধার করে এনে রান্না করে সন্তানদের মুখে দিচ্ছেন, কিছুটা নিজেরাও খাচ্ছেন। এরমধ্যে শৌচকাজ সারার জায়গা না থাকায় বিড়ম্বনা আরও বাড়ছে।
একই অবস্থা ওই সড়কে আশ্রয় নেওয়া দিনমজুর আশরাফুল আলম মুকুলের। বাড়িঘরে বন্যার পানি ওঠায় রমনা ইউনিয়নের এই বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন একই সড়কে। কিন্তু খাদ্যকষ্ট আর বৃষ্টির হানা থেকে রেহাই মেলেনি তারও। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার বানভাসি কয়েক হাজার পরিবারে।

বন্যায় রৌমারী উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত। জীবন বাঁচাতে হতদরিদ্রদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকা-রৌমারী সড়কে। এদের একজন নূর হোসেন। যাদুরচর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি নামক এলাকায় সড়কে আশ্রয় নেওয়া নূর হোসেন স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে চারদিন থেকে সড়কে থাকলেও এখনও কোনও ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ তার।

নূর হোসেন বলেন,‘ একে বানের পানি তার ওপরা ঝরি (বৃষ্টি)। হাতত ট্যাহাও (টাকা) নাই, কোনও সাহায্য পাই নাই। বাচ্চাগো নিয়া খুব বিপদে আছি।’

চারপাশে বানের ঘোলা পানি। ঘরে,উঠানে কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জো নেই। জীবন বাঁচাতে সড়ক কিংবা বাঁধই যখন শেষ আশ্রয়স্থল, সেখানেও মুষলধারে বৃষ্টির হানা। কুড়িগ্রামের মানুষের অবস্থা এখন এমনই সঙ্গিন, ক্ষুধা আর ছোটাছুটিতে নাজেহাল দিশেহারা অবস্থা।

টানা দু’দফা বন্যা আর নদ-নদীর তীব্র ভাঙন গ্রাসে চরাঞ্চলসহ অববাহিকার লাখো মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানির স্রোতে অনেকের বাড়িঘর ভেসে যাওয়ায় একেবারে সর্বসান্ত হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ পরিবার। কর্মহীন সময়ে প্রকৃতির এমন রুদ্র আচরণে নতুন সংকট তৈরি করেছে খাদ্যকষ্ট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদরের পাঁচগাছী, যাত্রাপুর ইউনিয়ন, রৌমারী উপজেলার রৌমারী-ঢাকা সড়ক, চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে গবাদি পশু ও শিশুসন্তান নিয়ে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। অপ্রতুল ত্রাণে খাদ্য সংকট আর বৃষ্টি বিড়ম্বনা তাদের কষ্ট আর ভোগান্তি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, রবিবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী আরও দুই তিনদিন ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
এদিকে আরও দুই থেকে তিনদিন ভারি বর্ষণ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন,‘ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। দীর্ঘ সময় বন্যা স্থায়ী হওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও কিছুটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে আমরা নিয়মিত মনিটরিংয়ে রাখছি এবং যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।’

এখনও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে আবারও ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢল পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে বলে জানান এই প্রকৌশলী।

এ ব্যাপারে জানতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে ফোন দিলে তিনি ব্যস্ত থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বর্ষণে বানভাসিদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন,‘ আমরা খাদ্যের সাথে ত্রিপলের চাহিদাও পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হবে।’