অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে বিএনপি। এছাড়া গণসমাবেশে দলটির ৭ জন সংসদ সদস্য (এমপি) একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের শেষ দিকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
বিএনপির ১০ দফা দাবিতে যা যা রয়েছে:
১. বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ–এর আলোকে দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ১০ ডিসেম্বর অবশ্যই ঢাকায় গণসমাবেশ হবে : ফখরুল
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী সব মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। দেশে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার যাবে না।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন–১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার, পানিসহ জনসেবা খাতগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
৮. গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত, শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদল বিএনপির সংসদ সদস্যরা। দলটি থেকে নির্বাচিত ৭ জন সংসদ সদস্যই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
পদত্যাগ করা ৭ এমপি হলেন: বগুড়া-৬ আসনের এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের এমপি মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি আবদুস সাত্তার ভূঞা এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমিন ফারহানা।
সমাবেশে বগুড়া–৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রথম পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা সাতজন এই বিশাল জনসমুদ্রকে সাক্ষী রেখে আজ পদত্যাগের ঘোষণা করতে চাই। আপনাদের সাক্ষী রেখে পদত্যাগপত্রের কয়েকটি লাইন আমি বলতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকরের গণতন্ত্র-গণবিরোধী কার্যকলাপে বাক্স্বাধীনতা, বিরোধী দলের ওপর দমন–পীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি।
এরপর অন্য সংসদ সদস্যরা একে একে পদত্যাগের কথা জানান। দেশের বাইরে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদের পক্ষে গোলাম মোহাম্মদ পদত্যাগের কথা জানান। আগামীকাল জাতীয় সংসদে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।