মোনেম মুন্না : জন্ম ৯ জুন ১৯৬৮ – মৃত্যু ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৫
“হি ওয়াজ মিসটেকেইনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ” – কথাটি বলেছিলেন আশি দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হয়ে আসা জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। যার উদ্দেশ্যে তিনি এ বাক্যটি বলেছেন, সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোনেম মুন্না। যাকে সেসময় ‘কিং ব্যাক’ হিসেবে ডাকা হতো।
আশির দশকের শেষভাগে আর নব্বই দশক পুরোটা জুড়ে বাংলাদেশ ফুটবল রচিত হতো মুন্নাকে ঘিরেই।
মোনেম মুন্নার জন্ম ৯ জুন, ১৯৬৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি অন্তঃপ্রাণ মুন্না পেশা হিসেবে বেঁছে নেন ফুটবলকে। তার পেশাদারিত্বের ছাপ সে সময় বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন রঙে রঞ্জিত করে। দলের সাফল্যের পিছনে ও সামনে থেকে দিয়েছিলেন নেতৃত্ব।
১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার লীগের মধ্য দিয়ে ফুটবলে অভিষেক হয় মোনেম মুন্নার। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পেশাদার ফুটবলে তাঁর উত্থান। পরের মৌসুমে শান্তিনগরে খেলার পর মুন্না যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে। পরের বছরই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। প্রথম দুই মৌসুম মুক্তিযোদ্ধা সংসদে খেলার পর এক মৌসুমের জন্য ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেন।
এরপর তিনি যোগ দেন ঢাকা আবাহনীতে। ১৯৮৭ সালে আবাহনীতে আসার পর সেখানেই গড়ে তোলেন নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার। ক্যারিয়ারে শেষ সময় পর্যন্ত আবাহনীর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন। নব্বই দশকে এদেশের ফুটবলে গণ অভু্ত্থানের সময় সব দেশের সেরা সব খেলোয়াড় চড়া মূল্যে বিভিন্ন ক্লাবে নাম লেখালেও মোনেম মুন্না টাকার কাছে বিক্রি হননি। আবেগ ও ভালোবাসায় সে সময় মুন্না একাই ছিলেন আবাহনীতে।
১৯৯২ মৌসুমের দলবদলে মুন্না আবাহনীতে দলবদলে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে। একটানা ৯৭ সাল পর্যন্ত আবাহনীতে খেলেছেন মুন্না। আবাহনীর হয়েই ফুটবলের বর্ণাঢ্য জীবন শেষ করেন। এরপরই বুট জোড়া তুলে রাখেন।
শুধু আবাহনীই নয়, মোনেম মুন্না যতদিন মাঠে ছিলেন ততদিন দেশের জন্যেও নিজেকে উজাড় করে খেলেছেন। খেলার সাথে কখনোই আপোষ করেননি। পুরোটা সময় আবেগ দিয়েই খেলেছেন লাল সবুজের পতাকার জন্য। সবসময়ই নিজের সর্বোচ্চটুকু দেশের জন্য দিতে সচেষ্ট থেকেছেন।
মাঝে একসময় কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দল ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেন তিনি। খেলা দিয়ে কলকাতায় নিজের জনপ্রিয়তা গড়ে তোলেন। সে সময় তাঁর খেলা দেখা কলকাতাবাসী এখনো সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার আসলাম সতীর্থ মুন্না সম্পর্কে বলেন, “প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে সে যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছিলো, এবং তাকে চেজ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো। যখন আমি ইস্ট বেঙ্গলে খেলতে গিয়েছিলাম আমি একটা ম্যাচে ইঞ্জুরড হই এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি, যখন আমার জ্ঞান আসে। আমি তাকে কাঁদতে দেখি।”
১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামেন। খেলেছেন টানা ১৯৯৭ সাল। ১১ বছরে দেশের হয়ে মাত্র দুটি খেলা মিস করেন তিনি। ১৯৯০ সালে বেইজিং এশিয়ান গেমসে কিং ব্যাক মোনেম মুন্না প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছিলেন।
১৯৯৯ সালের রমজান মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে জযাওয়া হয়। সেখানে তার কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। ছয় বছর মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন আমাদের কিং ব্যাক।