মুদ্রা নীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক




২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রা নীতি ঘোষণা করেছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে- যা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছিলো ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির গভর্নর ফজলে কবির ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের এই মুদ্রা নীতি ঘোষণা করেন।
ফজলে কবির বলেন, বিনিয়োগ ও উৎপাদন কর্মকান্ডে প্রবৃদ্ধি গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের অভ্যন্তরীণ ঋণের যোগাদন প্রবৃদ্ধিতে সংকোচন না এনে আগেকার ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ মাত্রায় অপরিবর্তিত রাখা হ হবেÑ যা অনধিক ৬ শতাংশ মূল্য স্ফীতিতে ও দেশজ উৎপাদনে প্রকৃত প্রবৃদ্ধির ৭ দশমিক ৪ শতাংশ সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সহায়ক হবে। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী বছরের মতো সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারক, ব্যবসায়িক ও আর্থিক খাত মহলের সঙ্গে কয়েক পর্বের আলোচনার ভিত্তিতে এই মুদ্রা নীতি প্রণীত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো, রিভার্স রেপো নীতি সুদহার গুলোও এ পর্যায়ে পূর্ববর্তী ৬ দশমিক ৭৫ ও ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের বেসরকারি খাতের অংশের প্রবৃদ্ধি আগেকার ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ মাত্রার চেয়ে উচ্চতর ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে প্রক্ষেপিত হয়েছে; সরকারি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের ব্যবহার কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের জন্য এই বৃদ্ধির পরিসর এসেছে। আমদানির বৈদেশিক পরিশোধ দায় স্ফীতির সম্ভাব্য মাত্রায় হ্রাস ধরেও নীট বৈদেশিক সম্পদ (এনএফএ)-এর প্রবৃদ্ধি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের শেষে প্রায় শূন্যের কোঠায় (শূন্য দশমিক ১ শতাংশে) দাঁড়াবে বলে প্রক্ষেপিত হয়েছে। সরকারের ব্যাংকঋণ ব্যবহারে ঋনাত্মক ধারা রিজার্ভ মুদ্রার (আরএম) প্রবৃদ্ধি পরিমিত রেখে মূল্যস্ফীতি চাপ উপশমে সহায়তা দেবে, পাশাপাশি প্রায় শূন্যের কোঠার (এনএফএ) প্রবৃদ্ধি ব্যাপক মুদ্রার (এম২) প্রবৃদ্ধিকে পূর্ব প্রক্ষেপিত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশের চেয়ে অনেকটা কম ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে পরিমিত রাখবে।
তিনি বলেন, গতিশীলতার স¦ার্থে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধির সংকোচন এড়িয়েই মূল্যষ্ফীতি চাপ ও বৈদেশিক লেনদেন খাতে স্থিতিশীলতার ওপর চাপ প্রশমন অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রা ও আর্থিকনীতি কার্যক্রমের উদ্দীষ্ট হবে। এই উদ্দীষ্ট অর্জনের জন্য আমরা প্রধাণত নির্ভর করবো ব্যাংকগুলোর ঋণ যোগান ও বৈদেশিক দায় সৃষ্টি স¦ স¦ প্রাতিষ্ঠানিক সংগতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাত্রায় পরিমিত রাখার ওপর।
ব্যাংকগুলোর আগাম ও আমানতের অনুপাতের নির্দেশিত মাত্রার যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক মুদ্রা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাসহ প্রাসংগিক সব ম্যাক্রোপ্রুডেন্সিয়াল নিয়মাচার শৃংখলা পরিপালনের বাধ্যবাধকতা কঠোরতর করা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংগতির সাথে সামঞ্জস্যহীন উচ্চমাত্রায় ঋণ যোগান অঙ্গীকার বা বৈদেশিক পরিশোধ দায় সৃষ্টি আমানতকারীদের স¦ার্থের এবং ব্যাপকতর জনস¦ার্থের হানিকর বলে প্রতীয়মান হলে তাদের এ ধরনের দায়িত্বহীনতা রোধে ব্যাংক কোম্পানী আইনের বিধানসমূহের কার্যকরী প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কঠোরতা সজ্ঞান অভিসন্ধিপ্রসূত বা অবিবেচিত অতি উৎসাহ প্রসূত উভয় ধরনের দায়িত্বহীনতা নিরুৎসাহিত করবে, ব্যাংক ঋণের গুনগতমান বৃদ্ধি করবে এবং যোগ্য প্রকৃত উৎপাদনমুখী উদ্যোগগুলোর জন্য অর্থায়ন যোগান প্রশস্ত করে সরকারের অর্ন্তভুক্তিমূলক ও পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনের পথ সুগম করবে।
গভর্নর বলেন, ঋণ কার্যক্রম ও বৈদেশিক পরিশোধ দায় সৃষ্টিতে কঠোরতর শৃংখলা আরোপের ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশের অর্থ ও মূলধন বাজারগুলোয় স্থানীয় ও বৈদেশিক উৎসের তহবিল আকর্ষণের আরও কয়েকটি পদক্ষেপ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রা ও ঋণনীতি কার্যক্রমে হাতে নেয়া বা জোরদার করা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কর্পোরেট গ্রাহকদের মেয়াদী প্রকল্প বিনিয়োগ অর্থায়নে ব্যাংকগুলোর ওপর অতিনির্ভরতার প্রবণতা ক্রমান¦য়ে কমিয়ে এনে এঁদেরকে মূলধন বাজারে বন্ড ইস্যু করে অর্থায়ন সংগ্রহে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোকে সক্রিয় করা।