নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম এক দিনের খেলাটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল। দ্বিতীয় খেলায় অফ স্ট্যাম্পের বাইরে লাফিয়ে ওঠা বল আপার কাট করে বাউন্ডারি ছাড়া করার চেষ্টা থাকলেও, খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। বরং সীমানার কাছে ধরা পড়ে ফিরে যেতে হয় প্যাভিলিয়নে। বরাবরের মতো আবারও ব্যর্থতা!
বলছি লিটন কুমার দাসের কথা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যাকে এখনো ভাবা হয় অটো চয়েজ। আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অন্যতম প্রধান ব্যাটার। ইনিংস গোড়াপত্তনের গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে লিটন কতটা অটো চয়েজ সেটা অবশ্য একটা প্রশ্ন।
বিশ্বকাপে যে কয়জন স্বভাবতই একাদশে জায়গা করে নিবে, লিটন কুমার দাস তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আসলে প্রশ্ন জাগে, লিটন একাদশে নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার যোগ্য কি না। কেননা ব্যাটে বড়ো ধরনের কোনো রানের দেখা না পাওয়ার পাশাপাশি খুব বাজেভাবে আউট নজির আছে। এক দিনের ক্রিকেটে লিটনের শেষ ষোলো ইনিংস যেন সেই সাক্ষ্যই বহন করছে।
এই ষোলো ইনিংসের মধ্যে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের সাথে সিরিজ, এশিয়া কাপের সুপার ফোর ও শেষ নিউজিল্যান্ডের সাথে দ্বিতীয় ওয়ানডে অন্তর্ভুক্ত। যেখানে অর্ধশতক তিনটি, কোনো শতক নেই আর শূন্য রানে আউট হয়েছেন চারবার।
শুরুটা ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে করা যাক। যেখানে তিন ম্যাচে লিটনের রান মোটে ৭, যা কেবল প্রথম ওয়ানডেতেই সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে আউট হতে হয়েছে শূন্য রানে।
ঘরের মাঠে পরবর্তী সিরিজ ছিল আয়ারল্যান্ডের সাথে। এই একটি সিরিজই লিটনের ভালো গিয়েছিল। তিন ম্যাচে করেছিলেন ১৪৬ রান। ছিল দুটি অর্ধশতক। প্রথম খেলায় ২৬ রানে আউট হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় খেলায় যথাক্রমে করেন ৭০ ও ৫০ রান। যদিও দ্বিতীয় খেলাটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়।
পরের সিরিজটিও ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই সিরিজে লিটনের তিন ইনিংসে মোট রান ৫৬। প্রথম খেলায় শূন্য রানে আউট হওয়ার পর বাকি দুই খেলায় যথাক্রমে ২১ ও ৩৫ রান করেন লিটন।
ঘরের মাঠে পরবর্তী সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের লিটনের মোট রান ৯২। সিরিজের শেষ খেলায় ৫৩ রানের এক ইনিংস খেললেও প্রথম দুই ম্যাচে রান ছিল যথাক্রমে ২১ ও ১৩।
এরপর আসে এশিয়া কাপ। জ্বরের কারণে গ্রুপ পর্ব মিস করলেও পরবর্তীতে সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের মাঠে ফিরেন লিটন। সেখানেও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন সে। আউট হন ১৩ রানে। এরপর শ্রীলংকার সাথে ১৫ রান করলেও ভারতের সাথে কোনো রান না করে ফিরে যেতে হয় তাকে।
সবশেষ নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলায় করেন ৬ রান। এই ষোলো খেলায় লিটনের ২১ গড়ে রান করেছেন মোটে ৩৩৫। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজের তিন ম্যাচ বাদ দিলে সে রান ১৩ ম্যাচে নেমে আসে মাত্র ১৮৯ রানে। তবুও লিটন নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে
কিন্তু কেন? আসলে খুব যে অপশন টিম ম্যানেজমেন্টের আছে এমনও না। মাত্র দশ দিন বাকি আছে বিশ্বকাপের। অনেককে অনেকভাবে সুযোগ দেওয়া হলেও কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি। তাই মন্দের ভালো হিসেবে লিটনেই ভরসা করতে হয়। যদি দুয়েকটা ম্যাচ জ্বলে ওঠে! এছাড়া বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে পরীক্ষা নিরীক্ষার মতো সুযোগ কোথায়?
এভাবে আর কতদিন? ঠিক যে কারনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ। বারবার একই পরিণতি। একই দৃশ্য মঞ্চায়িত। পারফরম্যান্স না করেও দলে জায়গা পাওয়ার যে প্রথা, সেই প্রথাতেই যেন বারবার হেরে যেতে হয়। আশা জাগিয়েও বারবার ব্যর্থতার চোরাবালিতে হাবুডুবু খায়। দায় যে কেউ মাথা পেতে নেয় না…