বাংলাদেশের এক চিরতরুণ বিশ্বনাগরিক ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের আজ শুভ জন্মদিন। এই বাংলাদেশী একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক। তিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক। অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।
দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব আন্দোলনের প্রধান নেতা। বিশ্বের সেরা ৫০ জন চিন্তাবিদের অন্যতম একজন তিনি। বিশ্বসেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় লিখা হয়েছে তার নাম। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তাকে দেয়া হয়েছে বিশেষ (সম্মানসূচক) ডক্টরেট।
১৯৮০ সালের পরের ডিকশনারিতে Micro Cradit শব্দটি যোগ হয় মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ধরে। নোবেলসহ বিশ্বের সেরা পুরস্কার ও স্বীকৃতিগুলো একে একে জমা হয় তার ড্রয়িংরুমে। এত বেশি পুরস্কার, অ্যাওয়ার্ড ও ডিগ্রিধারী মানুষ এখন আর বিশ্বে দ্বিতীয় জন নেই, অন্তত গিনেস বুক তাই বলে।
ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের বড় পরিচয় হলো তিনি একজন বাংলাদেশি। যে কাদামাটি গায়ে মেখে বড় হয়েছি আমরা, সেই কাদামাটির দেশেই জন্ম নিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ আমরা প্রফেসর ইউনূসের দেশের মানুষ। অথবা আমাদের দেশের সন্তান ড. ইউনূস। যেভাবেই বলি না কেন তিনি আমাদের বড় গৌরবের, বড় অহঙ্কারের।
দারিদ্র্য দূরীকরণে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য এবং সামাজিক ব্যবসার মানবিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব ইউনূসকে ভূষিত করেছে ১১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে। যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, আমেরিকার কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল, র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ, আগা খান অ্যাওয়ার্ড, সিডনি পিস প্রাইজ, সিউল পিস প্রাইজ প্রভৃতি।
বাংলাদেশও তাঁকে ভূষিত করেছে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরস্কার ও স্বাধীনতা পুরস্কারে। পৃথিবীর ২০টি দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি লাভ করেছেন ৫৫টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। বিখ্যাতটাইমম্যাগাজিনইউনূসকে একজন এশিয়ান হিরো এবং ২০০৮ সালে বিশ্বের ১০০ জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালের মধ্যে অন্যতম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ইউনূস রচিত বইগুলোর মধ্যে তাঁর আত্মজীবনী ব্যাংকার টু দ্য পুওর, ক্রিয়েটিং আ ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি ও বিল্ডিং সোশ্যাল বিজনেস আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং ১৫ থেকে ২০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০১২ সালে গ্লাসগোর ক্যালিডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নিযুক্ত করেছে।
ইউনূসের কর্মের ব্যাপ্তি আজ সারা বিশ্ব হলেও বাংলাদেশ নিয়েই তাঁর সমগ্র জীবন ও স্বপ্ন। বিগত চার দশকে বাংলাদেশে মানব উন্নয়ন সূচকে যে অভাবনীয় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি।
ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রসারের মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ চাকরি খোঁজার পরিবর্তে উদ্যোক্তা হয়ে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করতে অনুপ্রাণিত হবেন—এ আশায় ইউনূসের সুস্থ ও কর্মময় জীবন কামনা করছি। বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে ইউনূস দীর্ঘজীবী হোক। পেপার’স লাইফের পক্ষ থেকে শুভ জন্মদিন।