সারাবছর ইউরোপের ফুটবল উত্তেজনা ছুঁয়ে যায় ফুটবলপ্রেমীদের। মাঠের উত্তেজনা, মেসি-রোনালদো-নেইমারদের শ্রেষ্ঠত্ব রং ছড়ায় প্রতিনিয়ত। মৌসুম শেষেও সেই উত্তেজনা অব্যাহত থাকে। মাঠের বাইরের সেই আলোড়নের নাম দলবদল। ইউরোপের দলবদল সব আলো কেড়ে নেয় মৌসুম শেষেও।
প্রতিবছর দুইবার করে দলবদলের সূচনা হয়। মৌসুম শেষে জুলাই-আগস্টে প্রথমবার এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয়বার দলবদল। টাকার ঝনঝনানিতে এইসব দলবদলের অধ্যায় হয়ে উঠে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কে কোন দলে কত দামে যাচ্ছে, সব থেকে বেশি টাকা খরচ করে সেরাদের কিনে কোনদল যেই খরুচে তা নিয়ে আগ্রহে বিন্দুমাত্র কমতি থাকে না ফুটবলপ্রেমীদের মনে।
তবে এই দলবদলে অনেক নিয়ম কানুন থাকে। আজ তার কিছুটা নিয়ে আলোচনা করা যাক —
রিলিজ ক্লজ :
প্রথমেই আসা যাক, রিলিজ ক্লজ কি? খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তির প্রথম প্রক্রিয়া। ক্লাব চুক্তির সময় খেলোয়াড়দের সাথে রিলিজ ক্লজ ধার্য করে, যাতে অন্য ক্লাব তার পছন্দের খেলোয়াড়কে কিনতে চাইলে সেই পুরো অর্থ দিয়েই কিনতে হবে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রিয়াল মাদ্রিদ সি আর সেভেনের রিলিজ ক্লজ নির্ধারণ করেছে ১ বিলিয়ন ইউরো। তাঁর সাথে দামি খেলোয়াড়ের মুকুট ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বেনজেমা। আরও চার বছর চুক্তি বাড়িয়ে নেওয়া মেসির রিলিজ ক্লজ অনেক কম, ৩০০ মিলিয়ন ইউরো। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড আছেন তালিকার ছয়ে।
মজার ব্যাপার হলো সেরা দশের সবাই হয় রিয়াল মাদ্রিদের নয়তো বার্সেলোনার। কারন ইউরোপে শুধু স্পেনেই যে প্রত্যেক ফুটবলারের চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ বা বাই-আউট ক্লজ রাখা বাধ্যতামূলক। অন্য দেশে সেটি না রাখলেও চলে।
রিলিজ ক্লজ রাখার কারণ :
ফুটবলার আসতে চাইছেন, কিন্তু তাঁর ক্লাব বিক্রি করতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ? খেলোয়াড়ের চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ থাকলে সেটি পরিশোধ করে দিলেই খুব সহজে তাঁকে নিয়ে নেওয়া যাবে। কোনো ক্লাব যদি রিলিজ ক্লজ দিতে রাজি থাকে, তখন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না ক্লাব। খেলোয়াড়টি চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করলে তাঁকে ছাড়পত্র দিতেই হবে।
কিন্তু কোনো ক্লাবই তাদের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়তে রাজি থাকে না কিছুতেই। তাই চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ দিয়ে রাখা হয়, এক্ষেত্রে কিছুটা দাম বাড়িয়েও রাখা হয়। সে খেলোয়াড়কে কিনতে চাইলে পুরো দাম দিতেই হবে যেকোনো ক্লাবকে।
রিলিজ ক্লজ না থাকলে :
স্পেন ছাড়া আর কোনো দেশেই রিলিজ ক্লজ বাধ্যতামূলক নয়। তাই সেক্ষেত্রে পছন্দের সেরা খেলোয়াড়টিকে কিনতে চাইলে ক্লাবের উপর নির্ভর করতে হবে। ক্লাব যেই দাম চাইবে সেই দামই দিতে হবে।
বর্তমানে বার্সেলোনা লিভারপুলের কৌতিনহোর জন্য ৯০ মিলিয়ন ইউরো প্রস্তাব করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে অপর দিকে ওসমান ডেম্বেলের জন্য বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের দাবি ১৫০ মিলিয়ন ইউরো।
বিভিন্ন শর্তে রিলিজ ক্লজ :
বিভিন্ন শর্ত ও চুক্তির ভিত্তিতে থাকে রিলিজ ক্লজের মূল্য। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলা না খেলা কিংবা লীগে অবনমনের উপর থাকে রিলিজ ক্লজের শর্ত।
২০১২ সালে সোয়ানসি থেকে জো অ্যালেনকে লিভারপুলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাঁর চুক্তির অদ্ভুত একটা শর্ত কাজে লাগিয়েছিল লিভারপুল। অ্যালেনের চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, প্রিমিয়ার লিগের পাঁচটি নির্দিষ্ট ক্লাব ১৫ মিলিয়ন ইউরো দিতে রাজি হলে ক্লাব তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবে। ওই পাঁচটি নির্দিষ্ট ক্লাবের তালিকায় লিভারপুলের নামও ছিল।
ইস্কোকে কিনার সময় মালাগার সাথে চুক্তিতে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ যদি পাঁচ বছরের মধ্যে লা লীগা শিরোপা জিতে তবে মালাগা বাড়তি ১০ মিলিয়ন ইউরো পাবে।
বাই আউট ক্লজ কি? :
বাই-আউট ক্লজের ক্ষেত্রেও রিলিজ ক্লজের মতো একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক লেখা থাকে। পার্থক্যটা হলো, কিনতে ইচ্ছুক ক্লাব নয়, খেলোয়াড় নিজেই টাকাটা তাঁর ক্লাবকে দিয়ে স্বাধীন হয়ে যান। যেমন রোনালদো যদি নিজে রিয়াল ছেড়ে অন্য ক্লাবে যেতে চান, সে ক্ষেত্রে রিয়ালকে ১ বিলিয়ন ইউরো দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো ক্লাবে চলে যেতে পারেন।
কিন্তু আসলে খেলোয়াড় নিজে তো আর টাকাটা দেন না। তাঁকে যে ক্লাব পেতে চায়, তারাই খেলোয়াড়ের মাধ্যমে টাকাটা পরিশোধ করে।
কিছুদিন আগে রেকর্ড দলবদলে লা লীগা কর্তৃপক্ষ পিএসজি’র কাছ থেকে রিলিজ ক্লজের মূল্য নিতে অস্বীকৃতি জানালে, নেইমার নিজে বাই-আউট ক্লজ পদ্ধতিতে সে অর্থ পরিশোধ করেন।