ইসলামে ১৭ রমজানের গুরুত্ব অতি ব্যাপক। এজন্যই এ দিনের প্রেক্ষাপট ইসলামে বিশেষভাবে সংরক্ষিত। কেননা, হিজরি দ্বিতীয় সালের ১৭ রমজান বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আর এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের তার ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা সাহায্য করে বিজয় দান করেছিলেন।
ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরের যে স্থানটিতে মুসলিম বাহিনী অবস্থান নিয়েছিলেন, সে স্থানটিতে সূর্যের তেজ সরাসারি তাদের মুখের ওপর পতিত হয়। কিন্তু কাফেরদের মুখে দিনের বেলায় সূর্যের আলো পড়ে না। মুসলমানেরা যেখানে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করবেন, সেখানে বালুময় মাটি, যা যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত নয়। অপর দিকে কাফেররা যেখানে অবস্থান নিয়েছিল, সেখানে মাটি শক্ত এবং যুদ্ধের জন্য স্থানটি উপযুক্ত। কিন্তু প্রতিকূল দিক ও স্থানে অবস্থান নেয়ার পরও আল্লাহ তাআলা কী ফলাফল দান করলেন?
রমজান মাসের ১৬ তারিখ দিনটি শেষ, মাগরিবের পর তারিখ বদলে গেল, অতঃপর ১৭ রমজান শুরু হলো। সেই রাতে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাথিরা ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। অপর দিকে কাফেররাও তাদের ক্যাম্পে অবস্থান করছিল।
১৭ রমজানের এই বিশেষ রাতে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে সেজদায় পড়ে সাহায্য প্রার্থনা করছেন রাহমাতুললিল আলামিন হজরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি কেঁদে কেঁদে বলছিলেন-
‘হে দয়াময় আল্লাহ! আগামীকালের নীতিনির্ধারণী যুদ্ধে তোমার সাহায্য আমাদের অতি প্রয়োজন। এ যুদ্ধে আমরা তোমার সাহায্য ছাড়া বিজয় লাভ করতে পারব না। আর আমরা যদি পরাজিত হই তাহলে তোমাকে সেজদা করার কিংবা তোমার নাম ধরে ডাকার লোক এ পৃথিবীতে আর নাও থাকতে পারে। অতপর তুমিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো, তুমি কী করবে। কারণ, তুমিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মালিক। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাবো। আমরা আমাদের জীবন তোমার পথে উৎসর্গ করলাম। বিনিময়ে তোমার দ্বীনকে আমরা তোমার জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তুমি আমাদেরকে বিজয় দান করো। আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই।’ (যুরকানি, সিরাতে ইবনে হিশাম)’শত্রু সেনাদল পর্যুদস্ত হয়ে যাবে এবং পিঠ দেখিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাবে। আল্লাহ পাক এমনটিই করেছেন।’
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ দোয়া মহান আল্লাহ তাআলা কবুল করলেন। ওই রাতে মরুভূমিতে প্রবল বৃষ্টি হলো। এ বৃষ্টি মুসলমানদের জন্য কল্যাণে পরিণত হল। কারণ, বৃষ্টির কারণে কাফেরদের যুদ্ধের মাঠের শক্ত মাটি কাদায় ভরে পিচ্ছিল হয়ে গেল। অপর দিকে মুসলমানদের বালুময় যুদ্ধের মাঠ শক্ত হয়ে গেল।
ঐ রাত্রেই আল্লাহ তাআলা মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুভ সংবাদ জানিয়ে দিলেন- ‘তোমার অমুক অমুক শত্রু মারা যাবে এবং তারা অমুক অমুক জায়গায় মারা পড়বে। ঠিক তা-ই ঘটল।’
এ যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে সাহায্য করেছিলেন তার ফেরেশতা বাহিনী দ্বারা। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারির বর্ণনা মতে, ‘যুদ্ধের শেষে সাহাবিদের মধ্য থেকে কেউ কেউ সাক্ষী দিয়েছেন, আমরা সাদা পোশাক পরিহিত কিছু ব্যক্তিকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে দেখেছি। তাদেরকে আমরা যুদ্ধের আগে কখনো দেখিনি, এমনকি যুদ্ধের পরও দেখিনি।’
এ কারণেই রমজান মাসের ১৭ তারিখ ইসলাম ধর্মে এক বিশেষ ভুমিকা পালন করে।