করোনাযুদ্ধে একজন শহীদ সাংবাদিকের স্ত্রী এবং মানবিকতার অন্য দলিল!


bdnews24 bangla newspaper, bangladesh news 24, bangla newspaper prothom alo, bd news live, indian bangla newspaper, bd news live today, bbc bangla news, bangla breaking news 24, prosenjit bangla movie, jeeter bangla movie, songsar bangla movie, bengali full movie, bengali movies 2019, messi vs ronaldo, lionel messi stats, messi goals, messi net worth, messi height


চলছে করোনাকাল! এই সময়ে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মধ্যে শেষ ব্যাটালিয়ন তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইং হিসেবে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। সঙ্গে আছে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মি।এমনিতে তাদের নিয়ে অভিযোগ কম নেই। এমনকি অনেক হাসপাতাল সাধারন রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না। এমন ঘটনা প্রতিদিনই আসছে গণমাধ্যমে। কি সরকারি, কি বেসরকারী, যেন একই মুদ্রার এপিঠ -ওপিঠ ।

তবে কি নেই কোথাও আশার বিন্দু ? না, তা নয়।

যাপিত জীবনেরে অপরাপর শর্তের মতোই প্রোজ্জ্বলতায় আছে মানবিকতার আরেক চিত্র! আর এবার সে-ই চিত্র এঁকেছেন হাসপাতালের আইসিইউ থেকে সদ্য কেবিনে আসা এক মানবিক করোনা যোদ্ধা।

তিনি শারমিন সুলতানা রিনা। আমাদের গণমাধ্যম কর্মিদের প্রেরণা,করোনাযুদ্ধে নিহত সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের জীবনসঙ্গী। এই মানুষটি নিজে এখনো যুদ্ধ করছেন করোনার সঙ্গে পুত্র সন্তানকে নিয়ে।

করোনাযুদ্ধে একজন শহীদ সাংবাদিকের স্ত্রী এবং মানবিকতার অন্য দলিল!

হাসপাতালে বেড থেকে তিনি লিখেছেন, এক অসামান্য লেখা। চিকিৎসক আর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাঁর এই হৃদয়সংবেদী লেখাটি পড়ে দেখুন, আপনার ধারনা পাল্টে যাবে। মনে পাবেন অদম্য সাহস ! কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না ! জয় মানবতা !! (দেবদর্শন)

গল্পটা এভাবেও শুরু হলে হয়তো ভালো হতো—

একটি রুমে দুটো বেড আর পাশাপাশি দুটো মানুষ গল্প ও খুনশুটিতে কেটে যেতে পারতো আরো কিছু বর্ণিল সময় । আমাদের আরেকটা নতুন গল্পের সূচনা হতে পারতো এখান থেকে ; কিন্তু হলোনা কিছুই ।

ভাগ্যের অজানা পরিহাসে সব উল্টে পাল্টে গেলো এক মুহূর্তে আমার বাঁঁচার উপাদান। আমার হাসবেন্ড সাংবাদিক হুমায়ূন কবির খোকন ; যাকে আমি সবসময় ‘সাংবাদিক’ বলে সম্মোধন করতাম। যে একাকী চলে গেছে নির্জন মাটির ঘরে। তার ঠিক দুদিন পর ছেলেকে নিয়ে এসে উঠেছি হাসপাতালে ; পাশাপাশি দুটো সিটের কেবিনে। নিদারুণ শ্বাসকষ্ট নিয়ে আট দিন আইসিউতে কাটানোর পর ফিরে এলাম জেনারেল বেডে। আমি ও আমার ছেলে আবীর দুই মা-বেটা একটা কেবিনে আছি।

পুরো বিশ্ব এখন কোভিড১৯ করোনার মরণ ছোবলের কাছে হার মেনে যাচ্ছে। যুগে যুগে মানুষই সব বাঁধা বিপত্তি দূর করে অন্ধকার থেকে ছিনিয়ে এনেছে সোনালী আলোর বিকিরণ। মানুষ আবার জয়ী হবে, জয়ী তাকে হতেই হবে। জয় শব্দটা মানুষের আরেকটি প্রতিরূপ।

আমি যে হাসপাতালে আছি সেটা উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতাল। দেশের একমাত্র প্রাইভেট করোনা হাসপাতাল এটি।

আজীবনই আমার চোখে ঘুম কম। আমার খোকন সাহেব তার কাজ সেরে বাসায় আসতো রাত দুটো বা তিনটেয় । আসলে আমরা খেয়ে দেয়ে গল্প করতাম। চা খেতাম। গভীর রাতে আমাদের একসাথে কখনো পাশাপাশি কখনো মুখোমুখি বসে চা পানের তুমুল নেশা ছিলো দুজনেরই ।

রাতে আমাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু ঘুম আসেনা। আগে জেগে থাকতাম সুখে ; আর এখন একটা শূন্যতা ঘিরে ঘিরে থাকে, যার কোন বর্ণনা হয়না। হয়তোবা এটাই আমার অযাচিত নিয়তি।

রাতে একের পর এক করোনা রোগী আসে। তরুণ ডাক্তার নার্সগুলো তাঁদের অক্লান্ত সেবা দিয়ে যায়। সবার পরনে সাদা পিপি। তাঁদের দেখলে এক একজনকে মনে হয়— সফেদ দেবতা নেমে এসেছেন ধরায় ; মর্ত্যবাসীদের উদ্ধারে। এখানে আসার পর রোগ সমন্ধে আমার ভয় কেটে গেছে। কেটে গেছে হাসপাতাল সম্পর্কে অনীহা । এই রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতিটা সদস্যদের আচরণে যে ভালোবাসা আর মুগ্ধতা পেলাম, তাঁদের এ অবদান কখনও ভুলবো না।

এই হাসপাতালের যিনি চেয়ারম্যান জনাব শাহেদ চৌধুরীর সাথে আমার কথা হয়নি তবে আমার প্রিয়জনের সাথে নিয়মিত আমাদের চিকিৎসা নিয়ে যোগাযোগ করছেন। এখানকার ডাইরেক্টর মিজান ভাই আমাকে বোনের ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন। সর্বক্ষণ আমার ও ছেলের খোঁজ নিচ্ছেন। আছেন গণসংযোগ কর্মকর্তা শিবলি ভাই। ডাঃ ওয়াহিদ, যিনি নিয়ম করে দেখে যাচ্ছেন প্রতিদিন।

আসলে বলতে চেয়েছিলাম ডাক্তারদের গল্প কিন্তু শব্দেরাও হাত বাড়িয়ে আকাশ ছুঁতে চায়।

চোখের সামনে দেখা এসব ডাক্তার নার্সরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন ; তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ডাঃ সাবরিনা, ডাঃ মণি,ডাঃ ইমতিয়াজ সহ আরো অনেকেই এখানে আছেন আছেন নার্স, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এসব করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন, আনন্দ বিলিয়ে দিচ্ছেন রোগীদের মাঝে। তাঁদের এই ঋণ কি আসলে শোধ হবে?

ঢাকা শহরে বড় বড় হাসপাতালে করোনার কোন চিকিৎসা হচ্ছেনা। অথচ প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। আর করোনা নিয়ে মানুষের মনেও রয়েছে প্রচুর ভয়। করোনা রোগীর তিন ফুটের দূরত্বে ভাইরাস আসতে পারেনা। আর মানুষের মৃত্যুর পর তিন ঘন্টায় ভাইরাসের কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়।
সুতরাং লাশের শরীর থেকে তিনঘন্টা পর ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়।

করোনা আক্রান্ত রোগীর কোন দোস নয় এটা। এটা বিশ্ব জুড়ে এক মহামারী। যে কোন সময় যে কাউকে আঘাত করতে পারে। আবার প্রথম দিকে বুঝতে পারলে তা বাসার চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীকে তাচ্ছিল্য করা হয় বলে এরা জনসমক্ষে মুখ খোলে না ঘাতক ব্যাধিকে যন্ত্রণায় পোষে।

সামাজিক লজ্জায় এরা আরো ছোট হতে থাকে তখন তাদের মানষিক অবস্হার দ্রুত পতন ঘটে, যার পরিণাম মৃত্য।

গতকালও দেখলাম এক উপসচিব এর মৃত্যু। কিডনী জটিলতায়ও করোনা মনে করে তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হলো না।আমাদের মানষিকতার পরিবর্তন করে মানবিক হতে হবে। আমরা শারীরিক ভাবে একজন একজনের থেকে দূরে থাকবো এই দূরে থাকাটাই আমাদের আরো কাছে টানবে।

আমরা ভুলে যাই সব ভেদাভেদ এখন কেউ কাউকে দোস দিয়ে পিছিয়ে পড়ে মৃত্যুর কোলে আর ঢলে না পড়ি। সরকার, প্রশাসন সহ সবার কাজে সহোযোগিতা করি। বিশ্বের এই লগডাউনের বিপদে আমরা সবাই সবার পাশে দাঁড়াই।

যে ভাবে লিখতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারিনি। অনুভূতি কেমন ভোঁতা হয়ে গেছে। আমার এ ঘোর বিপদে যাঁরা আমার পাশে আছেন তাঁদের কে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা। তাঁদের সবার জন্য আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সুস্হ হয়ে যেনো বাসায় যেতে পারি— আপনারা আমার ও আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।

অবশেষে দেবতার রূপে প্রতিমুহূর্তে এখন যাঁদের দেখছি তাঁদের জন্য “কবি শেখ ফজলুল করিম”-এর এই কবিতাটি বারবার মনে পড়ছে—
কোথায় স্বর্গ, কোথায