করোনা সেরে গেলেও ক্ষত থাকতে পারে আজীবন


Corona sad image #paperslife


করোনাভাইরাসের ক্ষত আজীবন থেকে যেতে পারে এবং স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে, বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা থেকে সেরে ওঠা প্রতি তিনজন রোগীর একজনের ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী অবসাদ ও নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরে ধীরে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি এমনকি আজীবনের জন্য ট্রমা তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে আছে মস্কিষ্কের বৈকল্য এবং অ্যালঝেইমারের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি।

ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেরে ওঠা ৩০ শতংশ রোগীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে ৩৫ লাখ মানুষ কভিডে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে অন্তত ১০ লাখ মানুষ দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে।

এনএইচএসের কভিড রিকভারি সেন্টারের প্রধান দ্য টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, তিনি উদ্বিগ্ন কারণ করোনার প্রভাব কতটা দীর্ঘমেয়াদে রোগীকে আক্রান্ত করতে পারে, সে বিষয়ে তারা খুব সামান্যই জানেন।

সাফেকের বাসিন্দা লুইজি বার্নেস (৪৬) করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তিন মাস আগে। কিন্তু এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখা, বমি বমি ভাব, বুক ভার হয়ে থাকার মতো সমস্যায় তিনি আতঙ্কিত। এসব শারীরিক সমস্যা তাকে একাকিত্বে ভোগাচ্ছে। তিনি অনলাইনে একটি সাপোর্ট গ্রুপও খুলেছেন, যাতে প্রায় এক হাজার সদস্য হয়ে গেছে, যারা সবাই লুইজির মতো সমস্যায় ভুগছে।

লন্ডনের স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক পিটার পিয়ট দুনিয়ার ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। তিনিও কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন তিন মাস আগে। তাকে হাসপাতালে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। তিনি এখনো নানা সমস্যায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ যারাই আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে লড়াই করতে হতে পারে।

জানান, কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আসার পরও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়ে যাবে। আমার ক্ষেত্রে ফুসফুস অনেকটা স্থবির হয়ে গিয়েছিল এবং শ্বাস নিতে খুব সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা কয়েক মাস ছিল। অনেকে কিডনির সমস্যায়ও ভুগতে পারে।

এনএইচএসের সিকোল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল পরিচালক ডা. হিলারি ফ্লয়েড বলেছেন, তিনি এটা দেখে চিন্তিত যে ৪০ বা ৫০-এর কোটায় থাকা সুস্থ মানুষেরা আক্রান্ত হওয়ার পর এখন দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অবসাদ ও বৈকল্যে ভুগছে। তারা সবসময়ই এক রকমের দুর্বলতায় ভুগছে।

এনএইচএস জানাচ্ছে, কভিড-১৯-এর জন্য যাদের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তাদের ১০ জনে একজনের হূদরোগের সমস্যা তৈরি হয়েছে।

ডা. ফ্লয়েড জানান, অনেকে অবসাদ ও শ্বাসকষ্টে এমনভাবে ভুগছে যে ১০ মিনিটের বেশি শারীরিক শ্রমমূলক কিছু করতে পারছে না।

অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী তাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এ সমস্যার সবচেয়ে ভয়ানক দিকটি হচ্ছে যে করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, এমটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।