কোথায় গিয়ে থাকবেন সাকিব?


কোথায় গিয়ে থাকবেন সাকিব?


বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নামটা সাকিব আল হাসান। বিতর্ক যার পিছু ছাড়ে না। সাকিব আল হাসান যেখানে যান, বিতর্ক যেন সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এগিয়ে চলে। তবুও কি সাকিব আল হাসানকে থামানো গিয়েছে? তিনি ছুটেছেন নিজের মতো, নিজেকে তুলে ধরেছেন বা ধরছেন অনন্য উচ্চতায়। তার প্রমাণ তো আমরা পেয়েছি, গত বিশ্বকাপে এক অনবদ্য সাকিবকে অবলোকন করেছে গোটা বিশ্ব।

যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা ক্রিকেটার কে? সাকিব আল হাসানকে ছাড়া আর কারো নাম মাথায় আসে? বোধহয় না। তবুও সাকিব বিতর্কিত। অনেকের চক্ষুশূল। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেট ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন তার-ই দিকে ইশারা করে।

তামিম ইকবালের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়ার ঘটনায় সাকিব কারো কাছে খলনায়ক। আবার কেউ কেউ সমর্থন করছে সাকিবকেই। সব ছাড়িয়ে বর্তমান সময়ে ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত নাম সাকিব আল হাসান। আর সাকিব, সবকিছু ভুলে গিয়ে বিশ্বকাপের দিকে লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করছে।

আজকের এই আলোচ্য বিষয় সাকিবের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স। বিশ্ব আসরের এই বড়ো মঞ্চে সাকিবের চেয়ে অনবদ্য কেউ কি আছে? দেখা যাক সে হিসাব।

২০১৯ বিশ্বকাপ সাকিবের অমানবিক কেটেছে, সে কথা আমরা জানি। দুটি সেঞ্চুরি করেছেন, হাফ সেঞ্চুরি ছিল পাঁচটি। সর্বমোট রান ৬০৬। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার এমন ভয়ানক পারফরম্যান্স কোনো বিশ্ব আসরে করতে পারেনি।

আরো পড়ুন : কেমন হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ একাদশ?

সাকিব আল হাসানের এমন অমানবিক খেলা তাকে স্থান দিয়েছে বড় বড় রথী মহারথী ব্যাটারদের সাথে। চার বিশ্বকাপ খেলা সাকিব আল হাসান ম্যাচ খেলেছেন ২৯টি। তার সর্বমোট রান ১১৪৬। বর্তমান সময়ে সক্রিয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর আছেন ভিরাট কোহলি (১০৩০ রান), মার্টিন গাপটিল (৯৯৫ রান), ডেভিড ওয়ার্নার (৯৯২ রান) ও রোহিত শর্মা (৯৭৮ রান)। এর মধ্যে কেবল মার্টিন গাপটিল ফর্মহীনতার কারণে আসন্ন বিশ্বকাপে দলে জায়গা করে নিতে পারেননি।

যদি সর্বসাকুল্যে বিবেচনা করা হয়, তবে সাকিব আল হাসানের অবস্থান নবম স্থানে। তার উপরে আছেন শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, কুমারা সাঙ্গাকারা, ব্রায়ান লারা, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের মতো ক্রিকেটারেরা। সবার উপরে থাকা শচীন টেন্ডুলকারের রান ২২৭৮। রিকি পন্টিং করেছেন ১৭৪৩, কুমারা সাঙ্গাকারার মোট সংগ্রহ ১৫৩২ এবং ব্রায়ান লারা ১২২৫ রানে থেমে আছেন।

সাকিব আল হাসান যদি চলতি বিশ্বকাপে ১০০ রান করতে পারেন, তবে ব্রায়ান লারাকে পেছনে ফেলে উঠে আসবেন চার নম্বরে। আর ৪০০ রান বা তার অধিক করতে পারলে পিছিয়ে পড়বেন কুমারা সাঙ্গাকারা। ফলে এক দিনের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেরা তিনজন ব্যাটারের একজন হবেন সাকিব আল হাসান।

এ তো গেল ব্যাটিংয়ের কথা! বল হাতেও কি সাকিবকে ফেলে দেওয়া যায়? হয়তো অবস্থানে ব্যাটিংয়ের মতো সেরা অবস্থানে সাকিবকে কোনোভাবেই পাওয়া যাবে না। ২৯ ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিয়ে সাকিবের অবস্থান সক্রিয় খেলোয়াড়দের মধ্যে তৃতীয়। তার উপরে কেবল আছেন মিচেল মার্শ (৪৯ উইকেট) ও ট্রেন্ট বোল্ট (৪৪ উইকেট)।

সর্বসাকুল্যে সাকিব ২০ নম্বর অবস্থানে থাকলেও সুযোগ আছে অনেক উপরে যাওয়া। দশটি উইকেট নিতে পারলে সাত কিংবা আট নম্বর অবস্থানে প্রবেশের সুযোগ থাকবে সাকিব আল হাসানের। এতে ডেনিয়েল ভেট্টরি, অ্যালেন ডোনাল্ড, ব্রেট লি-দের মতো খেলোয়াড় পেছনে পড়ে যাবে।

সবকিছু ছাপিয়ে সাকিব আল হাসান একজন অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সুপারস্টারের চেয়ে কোনো খেলোয়াড়-ই একই সাথে ব্যাট হাতে কিংবা বল নিয়ে যেই দাপট দেখিয়েছে আর কেউ তা দেখাতে পারেনি। ১০০০ এর অধিক রান ও ৩০ এর অধিক উইকেট নেওয়া একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।

সাকিবের এই পরিসংখ্যান কোথায় গিয়ে থামবে? বিশ্বকাপ শুরু হতে মোটে কয়েকদিন। যার শুরুটা আজকে ওয়ার্ম আপ ম্যাচ দিয়ে, শ্রীলঙ্কার সাথে। তা-ই লক্ষ্যটা বাংলাদেশের দিকে। লক্ষ্যটা অবধারিত ভাবেই সাকিব আল হাসানের দিকে। তিনি কি পারবেন? সাকিব বলেছেন আগের মতো কোনো কিছুই করা সম্ভব না। তবুও সাকিব আল হাসান যেহেতু আছে, ভরসা করা-ই যায়!