খুলছে স্কুল-কলেজ, ঝুঁকি এড়াতে দায়িত্ব নিতে হবে সবার


bdnews24 bangla newspaper, bangladesh news 24, bangla newspaper prothom alo, bd news live, indian bangla newspaper, bd news live today, bbc bangla news, bangla breaking news 24, prosenjit bangla movie, jeeter bangla movie, songsar bangla movie, bengali full movie, bengali movies 2019, messi vs ronaldo, lionel messi stats, messi goals, messi net worth, messi height


করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আগামীকাল (রবিবার) থেকে খুলছে দেশের সকল স্কুল-কলেজ। ১৭ মাসের অধিক সময় বন্ধ লেখাপড়ার ক্ষতি আর দীর্ঘায়িত না করে ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা প্রশাসন। বাস্তবতা বিবেচনায় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাসের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের কম। তবে সূচকের ঘর এখনো ৫ শতাংশের বেশি রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার সংক্রমণের হার ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বুধবার ৯ দশমিক ০৭ শতাংশ, মঙ্গলবার ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগের দিন ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনা নিলে সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে শিক্ষার্থীরা পারিবারিক পরিম-লে কোলাহলের মধ্যেই থাকে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা প্রশাসন।

সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে হলে প্রত্যেকে যার যার নির্ধারিত দায়িত্বগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সারাবিশ্বে যে জনস্বাস্থ্যবিধি চালু আছে সেগুলোকে বাংলাদেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ বা এসওপি প্রস্তুত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।

এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, গভর্নিং বডি-ম্যানেজিং কমিটি ও মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতি দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর যেভাবে দায়িত্ব নির্ধারিত করা হয়েছে।

  • শিক্ষকদের দায়িত্ব : মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা ‘গাইডলাইন’ এবং ৫ সেপ্টেম্বরের দেওয়া নির্দেশিত কার্যক্রম সঠিকভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাদের মনোসামাজিক সহায়তা দেওয়া। শ্রেণি কার্যক্রমের শুরুতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক মোটিভেশনাল ব্রিফিং দেওয়া। স্কুল খোলার অল্প কিছুদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তা প্রশমনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। আনন্দঘন পরিবেশের মাধ্যমে শ্রেণি পাঠদান করা। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার নিজে পালন করবেন ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করবেন। কোনো শিক্ষক ক্লাস শেষে পরবর্তী শিক্ষক না আসা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করবেন না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা গাইডলাইন এবং নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন।
  • শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব : রুটিন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আগমন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্দেশিত দূরত্ব মেনে প্রবেশ, শ্রেণিকক্ষে বসা ও প্রতিষ্ঠান হতে বহির্গমন করা। অসুস্থতা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাকে জানানো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে শ্রেণি শিক্ষককে তাৎক্ষণিক অবহিত করা। অকারণে শ্রেণিকক্ষ থেকে বাইরে না যাওয়া। হাঁচি-কাশি, কফ ও থুথু ফেলার শিষ্টাচার মেনে চলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের আগে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা। প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার পথে এবং অবস্থানকালে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরিধান এবং ন্যূনতম ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
  • অভিভাবকদের দায়িত্ব : সন্তানকে মাস্ক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিশ্চিত করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সন্তানকে উৎসাহিত করা। সন্তানকে নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করা। প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে যাওয়া ও সঠিক সময়ে বাসায় আসা নিশ্চিত করা। সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য কোভিড আক্রান্ত হলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে অবিলম্বে জানানো। প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নির্দেশনা সন্তান ও অভিভাবক উভয়ই অনুসরণ করবেন। শুধু খাবার পানি বাসা হতে আনার বিষয়ে সন্তানকে উৎসাহিত ও নিশ্চিত করবেন। অন্য কোনো প্রকার খাবার বাসা থেকে নিয়ে না আসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সচেতন করবেন।
  • অভিভাবকদের দায়িত্ব : সন্তানকে মাস্ক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিশ্চিত করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সন্তানকে উৎসাহিত করা। সন্তানকে নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করা। প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে যাওয়া ও সঠিক সময়ে বাসায় আসা নিশ্চিত করা। সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য কোভিড আক্রান্ত হলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে অবিলম্বে জানানো। প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নির্দেশনা সন্তান ও অভিভাবক উভয়ই অনুসরণ করবেন। শুধু খাবার পানি বাসা হতে আনার বিষয়ে সন্তানকে উৎসাহিত ও নিশ্চিত করবেন। অন্য কোনো প্রকার খাবার বাসা থেকে নিয়ে না আসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সচেতন করবেন।
  • আঞ্চলিক পরিচালকদের দায়িত্ব : নিজ অধিক্ষেত্রাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা ‘গাইডলাইন’ নির্দেশিত কার্যক্রম সঠিকভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা। কেন্দ্রীয় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিজ অঞ্চলের সব কর্মকর্তাকে অবহিত করা ও যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা। তার দপ্তরে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য একটি কন্ট্রোলরুমের ব্যবস্থা করতে হবে যেখানে যে নম্বরে সবাই জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবে। তার আওতাধীন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনার কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে নিজে ব্যবস্থা নেবেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
  • আঞ্চলিক উপপরিচালকদের দায়িত্ব : নিজ অধিক্ষেত্রাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া নির্দেশনার নির্দেশিত কার্যক্রম সঠিকভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা। কেন্দ্রীয় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নিজ অঞ্চলের সব কর্মকর্তাকে অবহিত করা ও যথাযথ নির্দেশনা প্রদান এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা। তার দপ্তরে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য একটি কন্ট্রোলরুমের ব্যবস্থা করতে হবে যেখানে বা যে নম্বরে সবাই জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবে।
  • জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব : মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা ‘গাইডলাইন’ এবং ৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া নির্দেশনার কার্যক্রম তার জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে মনিটরিং করছেন কিনা তা তদারকি করা। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। তার জেলায় সংক্রমণের হার আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি হলে নিবিড় সার্ভিল্যান্সের ব্যবস্থা করতে হবে। তার দপ্তরে সংশ্লিষ্ট জেলার জন্য একটি কন্ট্রোলরুমের ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে যে নম্বরে সবাই জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবে। তার আওতাধীন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনার কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে নিজে ব্যবস্থা নেবেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
  • মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব : উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের প্রতি নির্দেশনা- মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা ‘গাইডলাইন’ এবং ৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া নির্দেশনার কার্যক্রম তার উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে দেওয়া দৈনিকভিত্তিক তথ্য ছক বিকাল ৪টার মধ্যে প্রেরণ নিশ্চিত করা। ঝরে পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গৃহীত কার্যক্রম মনিটরিং করা। কোভিড-১৯ অতিমারী পরিস্থিতিতে তার আওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় রাখা।

আরও পড়ুন : ঝুঁকি আছে, তবুও কাল থেকে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

এছাড়া প্রতিনিয়ত করোনা ভাইরাসের মনিটরিং করা হবে। করোনার ঝুঁকি বাড়ার সাথে সাথে স্কুল কলেজ আবার বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এ সংক্রমণের হার?

  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় (ইউনিয়ন, ওয়ার্ড) বিগত ১৪ দিনে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ জনের কম হয়, তা সর্বনিম্ন মাত্রা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
  • নিম্ন মাত্রায় হবে যদি ৫ থেকে ২০ জন সংক্রমিত হয়।
  • মাঝারি মাত্রা ঝুঁকি বলা হবে যদি ২০ থেকে ৫০ জন সংক্রমিত হয়।
  • উচ্চ মাত্রা ঝুঁকি হবে যদি ৫০ থেকে ২০০ জনের কাছাকাছি হয়। এর পর যদি ২০০ জনের বেশি হয়, তা হলে অতি উচ্চমাত্রা ধরে নেওয়া হবে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকায় বিগত ১৪ দিনে আরটি-পিসিআর টেস্টে পজিটিভ রোগীর শতকরা হার ৩ শতাংশের নিচে থাকে সর্বনিম্ন মাত্রা, ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের নিচে থাকে, তা হলে নিম্ন মাত্রা, ৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ হয় মাঝারি মাত্রা, ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের নিচে উচ্চ মাত্রা এবং অতি উচ্চ মাত্রা হবে ১০ শতাংশের ওপর সংক্রমণ হলে।
  • অতি উচ্চ মাত্রা ঝুঁকি চিহ্নিত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হবে কিনা পুনর্বিবেচনা করবে কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়লে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।