বাংলা সিনেমার সোনালি দিন, ‘মুখ ও মুখোশ’ এর ৬৪ বছর


বাংলা-সিনেমা, Mukh O Mukhosh


বাংলা সিনেমার সোনালি দিন ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট। বাংলাদেশ (তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায় এই দিনে।

ইকবাল ফিল্মস্ এর অর্থায়নে সিনেমাটি পরিচালনা করেন আব্দুল জব্বার খান।

চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয় মুকুল প্রেক্ষাগৃহে (বর্তমান আজাদ প্রেক্ষাগৃহ)। ঢাকার রূপমহল, চট্টগ্রামের নিরালা, নারায়ণগঞ্জের ডায়মন্ড এবং খুলনার উল্লাসিনী প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মুখ ও মুখোশ’।

সে সময় স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে কলকাতা অথবা লাহোরের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ. দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে জব্বার খান চলচ্চিত্রটি নির্মাণে উদ্যোগী হন।

১৯৫৩ সালে ফরিদপুরে সংঘটিত একটি ডাকাতির কাহিনীকে ঘিরে লেখা ‘ডাকাত’ নাটক হতে সিনেমাটির চিত্রনাট্য রচনা করা হয়।

দুই বছর পর পরিশ্রমের ফল আসে; হোটেল শাহবাগে ১৯৫৪ সালের ৬ আগস্ট চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর মহরত অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা।

তবে স্থানীয়ভাবে কোন ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও না থাকায়, সিনেমার নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়।

১৯৫৬ সালে ছবির কাজ শেষ হলেও বাংলা সিনেমার প্রথম সন্তানটি নিয়ে ঢাকায় ফেরার অনুমতি পাননি আব্দুল জব্বার। ‘মুখ ও মুখোশ’র প্রথম প্রদর্শনী হয় লাহোরে।

দুঃখের বিষয়, ঢাকায় ফিরে আসার পর সিনেমাটি প্রদর্শনীর বিষয়ে কোন প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়াও পাননি তিনি। তবে এ অবস্থা কাটাতে বেশি সময় লাগেনি।

কিছু দিন পরেই ‘মুখ ও মুখোশ’ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং খুলনার উল্লাসিনী সিনেমায় একযোগে প্রদর্শিত হয়। প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় রূপমহল প্রেক্ষাগৃহে।

সিনেমাটিতে দ্বিতীয় প্রধান পুরুষ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন আব্দুল জব্বার খান। মুখ্য পুরুষ চরিত্রে ছিলেন- ইনাম আহমেদ। প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন- পূর্ণিমা সেনগুপ্ত।

মজার বিষয়, স্থানীয় অভিনেতারা বিনা পারিশ্রমিকে এই ছবিতে অভিনয় করেন।

‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমার চমকে দেয়া তথ্য:

১) একটি আইমো ক্যামেরা, একটি সাধারণ টেপ রেকর্ডার, একটি জেনারেটর ও ‘প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি’র মাধ্যমে ‘মুখ ও মুখোশ’ এর চিত্রগ্রহণ করা হয়।

২) বাংলা সিনেমাটির প্রথম প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক।

৩) প্রথমে সিনেমাটির নাম রাখা হয়েছিল ‘ডাকাত’। পরে ফজল শাহাবুদ্দিনের পরামর্শে নাম রাখা হয় ‘মুখ ও মুখোশ’।

৪) সিনেমাটির নির্মাণব্যয় ছিল ৬৪,০০০ রুপি, আয় হয়েছিলো ৪৮,০০০ রুপি (তৎকালীন)। আর্থিকভাবে লোকসান হলেও, এই সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।