যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর সাথে নাশকতা সৃষ্টির বৈঠকে অংশ নেয়া বহুল আলোচিত রকি বড়ুয়াকে অবশেষে আট করেছে র্যাব। নগরীর পাঁচলাইশ এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাঁচ সহযোগী এবং বিদেশী পিস্তলসহ তাকে আটক করা হয়।
তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে গিয়ে ভেঙেছে তার দু’পা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অভিযুুক্ত রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। জামায়াত নেতা সাঈদীকে মুক্ত করার জন্য ভারতের লবিং ঠিক করার দায়িত্ব রকি বড়ুয়া নিয়েছিলো বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে কর্ণেল মশিউর রহমান জুয়েল জানান, ‘রকি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে গত কিছুদিন ধরেই আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিলো। বিশেষ করে জামায়াত নেতার ছেলের সাথে বৈঠক করে তিনি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছিলেন।
এমনকি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীদের মদদদাতা হিসাবেও চিহ্নিত এই রকি বড়ুয়া।’
র্যাব অধিনায়ক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে ধরার জন্য র্যাবের একটি দল রাতে নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে রকি বড়ুয়া তিনতলা বাড়িটির ছাদ থেকে লাফ দেয়।
ওই বাড়ি থেকে প্রথমে তার চার সহযোগীকে আটক করা হয়। কিন্তু রকি বড়ুয়াকে পায় না র্যাব সদস্যরা।
পরবর্তীতে বাড়ির পাশের ড্রেনে রকি বড়ুয়াকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। মূলত ছাদ থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে ড্রেনে পড়ে তার দু’পা ভেঙে যায়। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ওই বাসায় তল্লাশী করে পাওয়া যায় একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পিস্তলের গুলি এবং বিদেশী মদ।
এছাড়া রকি বড়ুয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর লালখান বাজার এলাকার অপর একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় রকি বড়ুয়ার এক বান্ধবীকে। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশী মদ এবং তার প্রতারনার নানা ধরণের নথি। এর মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাপড়’ও রয়েছে। নিজেকে ভিক্ষু হিসাবে পরিচয় দেয়া রকি বড়ুয়ার বাসায় বান্ধবী এবং বিদেশী মদ পাওয়া নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
র্যাব-পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া এলাকায় নানা ভাবে প্রতারনা করে আসছিলো অভিযুক্ত রকি বড়ুয়া। বিশেষ করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের সাথে তার তোলা ছবি দেখিয়ে তিনি নিজেকে ভারত সরকারের কাছের লোক হিসাবে জাহির করতেন। এলাকার লোকজন’ও তার ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকত।
তবে সম্প্রতি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী এবং জামায়াত সমর্থিত তারেক মনোয়ারকে নিয়ে বৈঠক করে তার গ্রামের বাড়িতে। সাঈদীকে মুক্ত করার জন্য ভারত সরকারের কাছে সুপারিশ করার পাশাপাশি দেশে অস্থিতিশীল সৃষ্টির জন্য ওই বৈঠকে পরিকল্পনা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বৈঠকের পর পরই লোহাগাড়া এলাকায় একটি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা’ও ঘটে।
অঘোষিত লকডাউনের মাঝে জামায়াত নেতার ছেলের চট্টগ্রাম আসা এবং বৈঠকের আয়োজন নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি রকি বড়ুয়া নিজেও দাবী করে শামীম সাঈদী ও তারেক মনোয়ার তার সাথে বৈঠক করেছে। এরপর থেকে রকি বড়ুয়ার সন্ধানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।