প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, সাহসিকতা, সহনশীলতা। বাঙালি জাতির জেদ, প্রত্যয়। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে যাত্রা করেছি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’
আজ বেলা ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ার সুধী সমাবেশে এসে পৌঁছান। সমাবেশের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরই বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুরুতেই দেশের মানুষের প্রতি তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু শুধু সেতু নয়, শুধু ইট-সিমেন্ট-কংক্রিটের কাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। সক্ষমতার, মর্যাদার প্রতীক।’
আরও পড়ুন: দ্বার খুলল পদ্মা সেতুর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের শক্তিই বড় শক্তি, তাদের শক্তি নিয়েই আমি কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ শেষ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের ২২ দিনের মাথায় সেতুর নকশা তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচণায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যায়। তাদের চ্যালেঞ্জ করলাম, দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে হবে। আমরা থেমে যাইনি। স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের কথা শুনেও মনে হয়েছে, সত্যি বুঝি দুর্নীতি হয়েছে। অনেক পানি ঘোলা হয়েছে, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে।’
ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দুই বছর বিলম্ব হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হতোদ্যম হইনি। মাথা নোয়াইনি। নিজেদের অর্থায়নে সেতু করার ঘোষণা দিই। উপদেষ্টা কমিটি হয়েছিল জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে। তাঁরাও বিশ্বাস রেখেছিলেন, আমরা পারব। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করা নিয়ে অনেকের সন্দেহ ছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন, সারা জীবন অন্যের দয়ায় চলব। বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েই এগিয়ে চলেছি।’
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের শক্তি বড় শক্তি। এ শক্তি নিয়েই নির্মাণকাজ শুরু করি। বাংলাদেশের জনগণকে স্যালুট জানাই। বাবা, মা, ভাই—সব হারিয়ে এ দেশের মানুষের ওপর ভরসা রেখেছি। জনগণের অনেকেই অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। বাজেটের টাকাও জনগণের টাকা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ জুনের সংবাদ সম্মেলনে জানান, পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু। মাওয়া থেকে জাজিরা। পদ্মা সেতু সড়ক, রেল, গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ ঘটাবে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের। নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে আছে সংযোগ সড়ক, রেল সংযোগ, নদীশাসন, পুনর্বাসন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা—নানা প্রকল্প ও কর্মকাণ্ড।