মানুষের মত হাতিও প্রায় ৭০ বছরের মত বাঁচে। মিল শুধু এটাই না সেই হাতির শরীরে মিললো ক্যান্সার বিরোধী জিন পি-৫৩ যাকে ক্যানসার প্রতিরোধী ‘জম্বি’ কোষ, এমনটাই আখ্যা দিচ্ছেন অনেকেই।
গবেষণায় দেখা গেছে, একই বয়সের মানুষের চেয়ে হাতির ক্যানসারে মৃত্যুহার অনেক কম। এর জন্য দায়ী প্রাণীর দেহে বিশেষ ধরনের এই পি-৫৩ সুপ্ত জিন, যা ক্যান্সার কোষ ধংস করতে পারে৷ হাতির শরীর মূলত এ জিন কাজে লাগিয়েই ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে৷
বিশ্বে ক্যান্সারে হাতির মৃত্যু কেবলমাত্র ৫ শতাংশ হারে হলেও মানুষের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ১৭ শতাংশ। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ক্যানসার ধ্বংসে যেসব কোষ ভূমিকা রাখে, হাতির শরীরে এমন কোষের সংখ্যা মানুষের তুলনায় প্রায় শতগুণ বেশি৷ অবাক হচ্ছেন, ভাবছেন কী আছে হাতির শরীরে?
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিনসেন্ট লিঞ্চের নেতৃত্বে ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জীন গবেষক ধারণা করছেন, এই ঘটনায় জড়িত কেবলমাত্র এই বিশেষ জিন পি-৫৩৷
আরও পড়ুন :
সেপ্টেম্বরেই বাজারে আসছে রাশিয়ার ভ্যাকসিন
শখের খেসারত, ২৩ লাখ টাকার ব্যাগ-এর ভাগ্য ডাস্টবিন
যে সকল কারণে প্রণব মুখার্জি ব্যতিক্রম
এক কোটি বছর পুরনো জীবাশ্ম উদ্ধার!
মানুষের মত প্রায় সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে এই পি-৫৩ জিন রয়েছে৷ যা মূলত ক্ষতিকর ডিএনএ চিহ্নিত করে তাকে ধ্বংস করে ফেলে৷ পরবর্তীতে শরীরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতোই কাজ করে শরীর থেকে বের করে দেয় সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষকে।
গবেষকরা অবাক হয়েছেন এটা দেখে যে, হাতির শরীরে এই বিশেষ জিন আছে ২০টির মতো৷ যার ফলে এই ব্যবস্থা হাতির শরীরে আরো ত্বরান্বিত ও কার্যকরী ভাবে কাজ করে৷ আক্রান্ত কোষ সময়মতো ধ্বংস করতে না পারলে তা একসময় টিউমারে রূপ নেয়৷
তবে গবেষকদের মূল আকর্ষণ অন্য জায়গাতে৷ মি. লিঞ্চ বলছেন, ‘জিন সবসময়ই নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে৷ কখনো কখনো তারা ভুলও করে, ফলে তৈরি হয় জিনের কিছু অকার্যকর ছদ্মজিন৷’
এই পি-৫৩ জিন নিয়ে গবেষণার সময় তাঁরা আরেক জিনের খোঁজ পান, যাকে বলা হয় লিউকোমিয়া ইনহিবিশন ফ্যাক্টর-৬, বা সংক্ষেপে এলআইএফ-৬ জিন।
গবেষনায় দেখা গেছে, মানবদেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকে কিন্তু হাতির শরীরে হঠাৎ করে কাজ করা শুরু করেছে এই জিনটি৷ বলতে গেলে পুনর্জন্ম হয়ে ফিরে এসেছে জিনটি৷
‘এবার আসি জম্বি জিন কি করে’
হাতির শরীর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সরিয়ে ফেলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই এলআইএফ-৬ জিন৷ এই জিন মূলত কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া বা শক্তিকেন্দ্রকে ছিদ্র করে কোষকে মেরে ফেলে৷
মি.লিঞ্চ আরও বলেন, ‘‘এটা অসাধারণ, কারণ, যখনই ক্যানসারের কোষ তৈরি হওয়া শুরু করে, তখনই তা সরিয়ে ফেললে ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় নির্মূল হয়ে যায়৷”
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন বছর আগে হাতির পূর্বপুরুষ হাইরেক্সের শরীরে এই জিনের কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয় বলে জানা যায়৷ তবে সেই হাইরেক্সের আকার ছিল বর্তমানের বানরের আকারের কাছাকাছি৷ এখন ধারণা করা হচ্ছে হাতির বিশাল আকৃতি এই ক্যানসার প্রতিরোধী এই জিনকে জাগিয়ে তোলার কারণ বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ক্যানসারবিধ্বংসী এই জম্বি কোষকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে মানব ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন লিঞ্চ ও তাঁর সহকর্মীরা৷ হয়তো নিকট ভবিষ্যতে তার সুফল মিললেও মিলতে পারে।