গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পেরিয়েছে ১০৪ দিন। এর মাঝে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এসব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পিক টাইমে পৌছাতে আরও দেড় মাসের মতো লাগতে পারে ।
এমনই এক প্রিতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিসিবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মার্চে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর প্রথম কয়েক দিন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক অঙ্কের ঘরে। তখন টেস্টের হারও ছিল বেশ কম। পরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
প্রথম রোগী খুঁজে পাওয়ার প্রায় এক মাসের মাথায় গত ৯ এপ্রিল এক দিনে শতাধিক ব্যক্তি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। এরও প্রায় এক মাস পর গত ১১ মে এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। এভাবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায় গত ২ জুন।
হিসেব অনুযায়ী, বাকি ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে শেষ ১৬ দিনে। আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং এভাবেই বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শিখরে পৌছবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে বাংলাদেশ। এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে ও বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ আক্রান্ত এখন ভারতে। তবে প্রতিবেশী দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ১০৯ দিন, সেখানে বাংলাদেশে লেগেছে আরও কম।
বাংলাদেশে পিক টাইম আসবে কবে যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণের পিক টাইম স্থায়ী ছিল প্রায় ৪২ দিন। ইউরোপের আরেক দেশ ইতালিতে পিক টাইম স্থায়ী হয়েছিল আরও কম। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন দ্রুতগতিতে বেড়েছে, তেমনি দ্রুত কমেও গেছে।
তবে বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের তিন মাস পার হলেও এখনো দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। দেশে করোনা সংক্রমণ কবে নাগাদ শিখরে পৌঁছবে সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পিক টাইম কখন আসবে এবং সেটা কতদিন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করছে কত টেস্ট করা হচ্ছে, মানুষ কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে, সরকার কতটা কড়াকড়ি আরোপ ও তার বাস্তবায়ন করছে এসবের ওপর।
চীন ও ইতালির মতো বাংলাদেশও যদি শুরু থেকেই লকডাউনের কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসত, তা হলে এত দিনে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছে আবার নিচে নামা শুরু হয়ে যেত।
এখনো যদি কঠোরভাবে জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করা হয়, রোগী শনাক্ত করে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা হলে সংক্রমণের বিস্ফোরণ রোধ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই পিক টাইম দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন।
একই মত বেনজির আহমেদেরও। তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে যদি এক হাজার হটস্পট বা রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয় এবং প্রতিটি রেড জোনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে কড়াকড়ি আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়, তা হলে আগামী ৪২ দিনের মাথায় সংক্রমণের পিক টাইম দেখা যেতে পারে। না হলে আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।