প্রবীণদের রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টির বিষয়ে কী বলছেন পুষ্টিবিদ ফারজানা?


পুষ্টিবিদ ফারজানা


মানব জীবন কালের প্রবাহে আবর্তিত। আজ যিনি প্রবীণ একদিন নবীন ছিলেন আজকের নবীনই ভবিষ্যতের প্রবীণ। বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন।

বার্ধক্য বা প্রবীণ হল মানব জীবন চক্রের শেষ ধাপ। জীবনের নাজুক ও স্পর্শকাতর অবস্থা। বার্ধক্য মানইে শারীরিক অবস্থার অবনতি। আমাদের দেশে সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মানুষকে প্রবীণ বলে গণ্য করা হয়।

অবস্থাটা এমন যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। শারীরিক দিক দিয়ে যেমন দুর্বলতা দেখা দেয়। রক্ত শূন্যতা, ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, ক্যান্সার, কিডনি রোগ, আর্থাইটিস, ডিমেনশিয়াসহ নানাবিধ মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি, আয়রনের অভাব দেখা দেয়। ত্বকের চর্বি কমে যায়, ঘামের গ্রন্থি কমে যায়। স্বাভাবিক শ্রবণ শক্তির ব্যাহত হয়। লালারস কমে যায়। ফলে স্বাদ কমে যায়। পাকস্থলির অম্লের পরিমাণ কমে যায়। ক্যালসিয়মের শোষণ হ্রাস পায়। মগজের আকার ও ওজন হ্রাস পায়। কাজের গতি ধীর হয়। মহিলাদের যোনিনালী শুকিয়ে যায় ও পিচ্ছিলতা হ্রাস পায়, অন্যদিকে পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থি বেড়ে যায়। কিডনির রক্ত চলাচলের ঘাটতি ঘটে। এ সময় থাইমিক হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। টিসেল হ্রাস পায়। সহজে সংক্রামক ব্যাধির শিকার হন। সারা শরীরের পানি কমে যায়।

মাংশপেশীর হ্রাস ঘটে, শরীরে বিশেষ করে পেটে চর্বি জমে অন্য দিকে রক্ত সংবহনকারী শিরা ধমনি দেয়াল শক্ত হয়ে যায় বলে সংকোচন ও সম্প্রসারণ কম হয়। এ সময় শারীরিক ও মানসিক যত্নের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যভ্যাস, জীবনাচরনে পরিবর্তন এবং কিছুটা শারীরিক ব্যয়াম অনুশীলন। খাদ্যাভ্যাসেও হতে হবে সর্তক।

লবণ, চিনি, গুড়, মিষ্টি লাল আলু, সাদা ভাত, সাদা রুটি, ময়দার তৈরি খাবার চর্বিযুক্ত খাবার, গরু খাসির চর্বি এবং তেলে ভাজা খাবার গুলো খেতে হবে সর্তকভাবে। অন্যদিকে ডায়বেটিস ও হৃদ রোগসহ অন্যান্য ননকমিউনিক্যাবল ডিজিজ গুলো থাকলে সাদা চিনি গুড় সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা বাঞ্চনীয় অবশ্য এর সাথে চর্বি যুক্ত খাবার ঘি, মাখন, ডালডা, পনির, মার্জারিন, চিংড়ি মাছ, হাড়ের মাংস, মাংসের চর্বি কলিজা, মগজ ও মাছের ডিম না খাওয়াই উত্তম।

চর্বিহীন মাছ, মাংস, ডিম, হাস- মুরগি, সারাদিন ১০০-১২০ গ্রাম মাছ মাংস, একটা ডিম খাওয়া উত্তম। কম চর্বি যুক্ত দুধ, দই বা দুধের খাবার খাওয়া যেতে পারে এক কাপ বা দুই কাপ পরিমাণে। বাদাম, সিমের বিচি খাওয়া যেতে পারে। ১০ গ্রাম কাজু, আমন্ড ৬-৮ টা দেশি বাদাম বা যা কিনা চিনাবাদাম নামে পরিচিত ১৫-২০ দানা পর্যন্ত এ ছাড়াও পাতলা করে রান্না করা ডাল এ বয়সিদের জন্য হজম করতে সুবিধা। তাই পাতলা ডাল দুই কাপ দুই বেলা খাওয়া ভাল। এর খেতে হবে টাটকা সবুজ শাক সবজি,সালাদ-সবজি।

অন্যদিকে প্রতিদিন গাঢ় রঙ্গিন ফল খাওয়া যেতে পারে । সম্পূর্ণ ভুষিযুক্ত আটার রুটি অথবা তুশযুক্ত চালের ভাত খাওয়া ভালো সেক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের সাথে বছরে ১-২ বার সাক্ষাতের মাধ্যমে তার বয়স, কাজের ধরন রোগ ব্যাধির ধরন জানিয়ে সঠিক খাবার গ্রহণের তালিকা ও খাদ্যবিষয়ক পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম এবং এর সাথে ৮-১০ গ্লাস পানি /পানীয় গ্রহণ করা দরকার।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে খাবার ব্যক্তি বিশেষের জন্য অবশ্যই হতে হবে একক বা। সে জন্য অবশ্যই চিকিৎসা সেবা গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক ভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত পুষ্টি পরামর্শ গ্রহণ শুধু মাত্র রোগ হলেই নয় বরং সব সময় প্রয়োজন। সঠিক খাদ্যভাস যা কিনা জীবনযাত্রার ধরন অনুযায়ী মেনে চললে অনেকক্ষেত্রেই নন কমিনিকেবল ডিজিজ থাকা সত্ত্বেও প্রবীণেরা থাকতে পারেন অনেক বেশি সজীব ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ।

 

ফারজানা আনজিন

ডেপুটি চিফ নিউট্রিশন অফিসার

ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক

ধানমন্ডি-ইব্রাহীম জেনারেল হাসপাতাল ও ডিসিইসি

যুগ্ম সম্পাদক

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস নিউট্রিশন সোসাইটি