অর্থনৈতিক উৎপাদনের তিন গুণেরও বেশি বৈশ্বিক ঋণ




বিশ্বব্যাপী ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ২২৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই পরিমাণ ঋণ বৈশ্বিক বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের তিন গুণেরও বেশি। এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অতি সস্তা ঋণনীতি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করছে।
২০০৯ সালে বিশ্বব্যাপী ঋণ বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য অভূতপূর্ব নিম্ন হারে সুদহারের প্রচলন করা হয়। আর নিম্ন সুদহার স্বাভাবিক করার সমস্যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের একার নয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী এই বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
আগামী বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেদের আড়াই বছরের পুরনো প্রণোদনা কর্মসূচি ছেঁটে ফেলতে যাচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে সুদের হার বাড়ানোর চিন্তা করছে। অন্যদিকে বছরে তৃতীয়বারের মতো সুদ হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)।
বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম সুদে নগদ পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারগুলো ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এগুলোর কিছু কিছু নিয়মিতই রেকর্ড ভেঙেছে। তবে এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঋণ বৃদ্ধির বিস্ফোরণ দেখা গেছে। ফলে গৃহস্থালি, কোম্পানি এবং সরকারগুলো সর্বনিম্ন সুদহারের সুবিধা গ্রহণ করে এসেছে।
বৈশ্বিক সুদহার নিয়ে বুধবার ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স (আইআইএফ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ বৈশ্বিক বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৩২৪ শতাংশ।
বৈশ্বিক পুঁজির প্রবাহ পর্যবেক্ষণের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রামাণিক সংস্থা আইআইএফের প্রতিবেদনটি ‘রোলওভার’ ঝুঁকির বিষয়টিকেও জোর দিয়ে উল্লেখ করে। তারা উদীয়মান বাজারগুলোর ওপর জোর দিয়েছে, যে বাজারগুলো ইউরো ও ডলারের মতো শক্তিশালী মুদ্রা ধার করেছে।
প্রতিবেদনের হিসাব অনুসারে, উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর ২০১৮ সাল শেষ হওয়ার আগে পুনঃঅর্থায়ন কিংবা ঋণ পরিশোধের জন্য প্রায় ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। যদি এ সময়ের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোয় সুদহার বেড়ে যায় এবং পশ্চিমা মুদ্রাগুলো আরো শক্তিশালী হয়, তবে এসব ঋণ পরিশোধ আরো বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
এরই মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার চার দফা বেড়েছে। ইউরোপের মুদ্রানীতিও আরো বেশি কঠোর করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিবার্ষিক ঋণের ব্যয় নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
আইআইএফ জানায়, ঋণের পরিমাণ বাড়ার অন্যতম মূল দায় উন্নয়নশীল বিশ্বে ঋণের মাত্রা ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে যাওয়া। এসব দেশে এখন মোট ঋণের পরিমাণ ৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে চীনের ঋণ বেড়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ফলে দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলার। আরো বিস্তারিতভাবে বললে, বৈশ্বিক করপোরেট ঋণ ও গৃহস্থালি ঋণ বেড়ে যথাক্রমে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার ও ২ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আইআইএফ জানায়, ফেডারেল রিজার্ভের কড়াকড়ি চলতে থাকলে ঋণের রোলওভার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কিছু উন্নত অর্থনীতি সরকারি ঋণ কমিয়ে অনবরত ডিলেভারেজ করার চেষ্টা করেছিল এবং বৈশ্বিক ঋণ প্রবৃদ্ধি সামান্য পরিমাণে বেড়েছিল।